রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে দ্বাদশ বাংলা অলিম্পিয়াডে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক-সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ।

বক্তব্য দেন বাংলা অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক কামরুল আহসান এবং ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ-এর প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন এবং ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ জলদোশভ। উপস্থাপনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, কবি জীবনানন্দ দাশের মা কবি কুসুমকুমারী দাশ লিখেছেন, আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। বাংলা অলিম্পিয়াডে এসে মনে হচ্ছে, এখানকার ছেলেমেয়েরা কথায় নয়, কাজে বড় হয়েছে। ক্লাসের পড়াশোনা যথেষ্ট নয়, শিক্ষার্থীদের আরও নানা কাজকর্মে যুক্ত হতে হবে। সবাই মিলে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক- সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলা আমার অহংকার। খেলাধুলার জন্য নানা দেশে গিয়ে বাধ্য হয়ে ইংরেজি বলি। কিন্তু বাংলা আমার সবচেয়ে বড় অহংকারের জায়গা। আবারও জন্মগ্রহণের সুযোগ থাকলে বার বার নয়, হাজারবার আমি বাংলায় জন্ম নিতে চাইবো।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ বলেন, মাতৃভাষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এ দেশের ৯৮% মানুষ বাংলায় কথা বলে, বাকি ২% মানুষ অন্যান্য ৪০টি ভাষায় কথা বলে। আমাদের ইন্টারন্যাশনাল মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অন্যতম লক্ষ্য মাতৃভাষাগুলোকে প্রতিষ্ঠা করা। ফলে এবার আমরা বাংলা অলিম্পিয়াডের সহযোগী হয়েছি। ভাষা মানুষের আত্মপরিচয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ছেলে মেয়েরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক, তাদের পরিচয় বাঙালি।

ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুলবাংলাদেশ’র অধ্যক্ষ রোকসানা জারিন বলেন, প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষাচর্চার এই প্রতিযোগিতার এক যুগপূর্তির আয়োজন করতে পেরে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা মনে করি, এক যুগ ধরে এতবড় একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমাদের স্কুল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলা কুইজ বিভাগে এ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারী বিএফ শাহীন ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের শিক্ষার্থী অর্ণব দাস, বি গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জনকারী আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রুকাইয়া তাসনিম রাইসা, সি গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জনকারী হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী সানিলা নাঈর।

অঙ্কনে এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী রণবিজয় ধর, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাহসিন তারান্নুম আহির, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ওয়ার্ড ব্রিজ স্কুলের শিক্ষার্থী তাসিন তাবাসসুম। রচনা প্রতিযোগিতায় এ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ উত্তরা শাখার শিক্ষার্থী নাফিসা শিকদার, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী দেবাঞ্জনা বড়ুয়া, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে প্লে পেন স্কুলের শিক্ষার্থী সাফওয়ান ইনতিশার। উপস্থিত বক্তৃতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মুয়াজ আজাদ। নৃত্য প্রতিযোগিতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে নেভি এঙ্করেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ ব্রিজ স্কুলের শিক্ষার্থী আরিয়া ইয়াশারাহ রায়হান, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে আবদুল কাদের মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী কল্যাণী বর্মন রুথ, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ইবতিদা হোসাইন। সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় এ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী নাদিদ ইয়াসার, বি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে প্লে পেন স্কুলের শিক্ষার্থী আর্নাভাজ হায়াত চৌধুরী, সি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাতিন শারহা, ডি ক্যাটেগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ-এর শিক্ষার্থী সাজিয়া মোহাম্মদ নহু এবং ই ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী ফিওনা ভান্ডারী।

এরআগে শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) উত্তরায় স্কুল প্রাঙ্গণে দ্বাদশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। ৭০টি স্কুলের ৯০ টি শাখা এ বছর বাংলা অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। বাংলা অলিম্পিয়াডের যুগপূর্তিতে এসে এ বছরই প্রথমবারের মতো সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।

নয়াশতাব্দী/জেডএম