নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
কৃষি নির্ভর জেলা নেত্রকোনা। প্রতিবারের ন্যায় এবারও কৃষকরা ধান আবাদে মাঠে নেমেছেন। জেলার হাওর বিস্তৃত উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরিতে এর মধ্যেই শেষ হয়েছে বোরো ধান রোপণের কাজ। কৃষকরা এখন জমিতে সেচ আর বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাওরের বিস্তৃত জমি এখন সবুজের সমাহার। চোখ আটকে যায় চির হরিৎ সবুজের দিগন্ত বিস্তৃত সুন্দরে।
হাওরপাড়ের কৃষক চান্দু মিয়া। নিজের ১৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করছেন ধানের চারা। শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় পরপর তিনটি জমিতে একাই কাজ করেছেন। ধান চাষে এখন পর্যন্ত তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় একশ মণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন তিনি। যা বাজারে বিক্রি করে তার আয় হবে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো।
চান্দু মিয়ার মতো হাজারো কৃষক বোরো মৌসুমের এই ফসলেই সারা বছরের খোরাক জোগায়। বছরের ছয় মাস ধানে আর বাকি ৬ মাস হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। তবে ধান চাষে ব্যয় আর বিক্রয় মূল্যের তারতম্যে ছিটকে পড়েন অনেক কৃষক।
এদিকে গত বছরের আগাম বন্যার কারণে এ বছর হাওরে স্বল্প মেয়াদি ধান চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বি ধান ২৮ এর প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেশি। বাকি ৭ উপজেলায় বোরো আবাদ চলছে পুরোদমে। বিশেষ করে জেলার সীমান্তবর্তী ২ উপজেলাসহ উঁচু জমিগুলোতে এখনো ধানের চারা রোপণের কাজ চলছে। জেলা জুড়ে বোরো ধান রোপণের কাজ এখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।
এবছর জেলা জুড়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাঝে শুধু হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার ৯০০ হেক্টরের জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগাম বন্যাসহ এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলা জুড়ে চালের উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন। সরকার নির্ধারিত প্রতি টন চালের দাম ৪২ হাজার টাকা দরে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার চাল উৎপাদন হতে পারে। যা থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রফতানি করা যাবে।
কৃষকরা বলছেন, এবার বোরো ধানের আবাদকে ঘিরে জমিগুলো আগে থেকে তৈরি করছেন কৃষকরা। গেল বছরের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই বছর ভালো ফলন ঘরে তোলার আশা দেখছেন। তবে সময় মতো সার আর সেচের ব্যবস্থা না থাকলে ফলন ভালো হবে না বলে শঙ্কায়য় কৃষকরা। যদিও সারের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। তার বলছেন হাওর ও উঁচু জমিগুলোতে সেচের যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষকরা সময় মতো সব কিছু তাদের হাতের কাছে পাবে বলে আশ্বাস কৃষি বিভাগের।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, এবছর সময়ের আগেই কৃষকরা বোরো আবাদ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে হাওরে বোরো আবাদ শত ভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। পুরো জেলায় ৭৫ ভাগ ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলার হাওর ঘেরে যে উপজেলাগুলো রয়েছে, সেখানে যেন আগাম বন্যার কারণে বোরো ফসলের কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য স্বল্পজীবনকালীন ধানের জাত রোপণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মাঝে বি খান ২৮ একটি জাত। এছাড়াও কৃষক পর্যায়ে নানা উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। যেনো কৃষকরা ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ