নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
ঢাকার অদূরে গাজীপুর থেকে মেলায় এসেছিলেন তিন বন্ধু সাইফ আলী, রিয়াজ হেকমতউল্লাহ ও কামরান বাছির। প্রতি বছর একাধিকবার তারা বইমেলায় ঘুরতে আসেন।
বুধবার ( ১৫ ফেব্র’য়ারি) তারা এলেন তৃতীয়বারের মতো। তাদের সঙ্গে কথা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নের সামনে। তাদের একজন কামরান বাছিরের হাতে দেখা গেল বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটির বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণ। তিনি জানালেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লেখা বইটি আগেই পড়েছি। তবে এটা এখন আমার সংগ্রহে নেই। কোনো কারণে হারিয়ে গেছে। তাই আবার কিনলাম। সেই সঙ্গে ইংরেজি সংস্করণটাও। সঙ্গে আরও কয়েকটি বই কিনেছি। এখন মেলা ঘুরে দেখছি আর কি কি বই কেনা যায়।’ তিনি বলেন, ‘বই কেনার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ রয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকে বই পড়া-সংগ্রহের অভ্যাস আমার। মেলায় ঘুরে ঘুরে বই কিনতে ভালোই লাগে। সেই সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাটাও হয়’।
মেলার টানে প্রতি দিনই দলবেঁধে বইমেলায় আসেন তরুণ-তরুণীরা। তাদের ঘোরাফেরা, গল্প, আড্ডা, গান, ছবি তোলা আর হাসির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। তারা স্টল-প্যাভিলিয়নে ঘুরে উল্টেপাল্টে দেখেন বই। পছন্দ হলেই নিয়ে নেন নিজের সংগ্রহে। মেলার একপাশে দাঁড়িয়ে পান করেন চা, কফি বা শীতল পানীয়। তাদের বড় একটি অংশ বই কিনতে নয়, বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে মেলায় ঘুরতে আসেন। তবে তাদের পদচারণা না থাকলে মেলা জমে না।
মেলাপ্রাঙ্গণ খুলে দেয়ার পরপরই প্রবেশ করে নানা বয়সি মানুষ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বইমেলা। তাদের কেউ কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, আবার কেউ এসেছেন বই কিনতে। শুধু যে তরুণ-তরুণীরা এসেছেন এমন নয়; শিশু থেকে মধ্য বয়সিরাও এসেছেন মেলা। মধ্য বয়সি পাঠক-ক্রেতা আবুল হোসেন জানালেন, ‘ছেলেকে মেলায় নিয়ে এলাম সংস্কৃতির শেকড়ের পরিচয় করিয়ে দিতেই। আজকাল ফেসবুক-টিকটকের যুগের কারণের নিয়মিত বই পড়া-কেনাটাই হচ্ছে না। তাই নিজেও চলে এলাম।’
পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের তুলনায় বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সমাগম ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু বই বিক্রি হয়েছে সন্তোষজনক। এদিন মেলায় পাঠক-ভক্তদের হাতে অটোগ্রাফসহ বই তুলে দেন ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হকের মতো খ্যাতিমান লেখকরা।
মেলাপ্রাঙ্গণে ঘুরতে এসেছিলেন ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থী। তাদেরই একজন শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুবান্ধব মিলে মেলায় ঘুরতে এসেছি। করোনার পর এবারই মুক্তমনে মেলায় এলাম। মেলার পরিবেশ আগের থেকে অনেক ভালো লাগছে। বই কিনব না কিনব করে চারটি বই কিনেই ফেললাম। এখন স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখছি।’
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নতুন বই এসেছে ৮৪টি। মেলায় কথাপ্রকাশ এনেছে আবুল কাশেমের সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক ভাবনা বিশ্ব’, পাঠক সমাবেশ এনেছে ইকতিয়ার চৌধুরীর ‘যমুনা সম্প্রদায়’, অনন্যা এনেছে সালমা কিবরিয়ার ‘আলোকিত একুশ’, আগামী প্রকাশনী এনেছে রফিকুর রশিদের ‘ছড়িয়ে গেল ভাষার লড়াই’, ভাষা প্রকাশ এনেছে বাদল রায়হানের ‘সোমেশ্বরীর জলে’, বলাকা প্রকাশন এনেছে মাহবুব আজাদ সম্পাদিত ‘কিশোরী ভূতের বয়ফ্রেন্ড ও ষোলো ভূতের গল্প’, জয়তি এনেছে জাহিদ হায়দারের ‘জীবিকা জট ও আট মাত্রা’ অন্যতম।
বইমেলার মূলমঞ্চে ছিল ‘বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ ইকবাল। আলোচক ছিলেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদ আরেফিন।
প্রাবন্ধিক বলেন, ‘লিটল ম্যাগাজিন একটা চির নতুন প্ল্যাটফর্ম। সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা— এ সবই লিটল ম্যাগাজিনের মূল বৈশিষ্ট্য। লিটল ম্যাগাজিনের দিগ্বলয় চলিষ্ণু ও ক্রমবর্ধমান। এর ধারণা-বৈশিষ্ট্য কিংবা পন্থা ও পরিণাম অনতিক্রান্ত নয়, ক্রমবিকশিত ও পরিবর্তিত। আর তা নিশ্চয়ই এ দেশের মৃত্তিকা ও সংস্কৃতিকে অনুরুদ্ধ করেই পরিচালিত ও বিকিরিত। পরিচর্যায় পথটিও সে লক্ষ্যেই নির্ধারিত।’
আলোচকবৃন্দ বলেন, ‘প্রচলিত ও গতানুগতিক সাহিত্যচর্চার বাইরে নতুন চিন্তাচেতনাকে ধারণ করে যে পত্রিকা, সেটাই লিটল ম্যাগাজিন। নতুন ও তরুণ লেখকরাই লিটল ম্যাগাজিনের ধারক। প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার একটি মাধ্যম লিটল ম্যাগাজিন। আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার স্ফুরণ ঘটে এ পত্রিকায়। প্রচলিত ধারণাকে অস্বীকার করে নতুন কিছু বিনির্মাণ করতে চায় বলে লিটল ম্যাগাজিন সব সময়ই স্পর্ধিত এক চর্চার নাম।’
সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদ আরেফিন বলেন, ‘সাহিত্য আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রথাবিরোধী তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে লিটল ম্যাগাজিনের গৌরবকে সমুজ্জ্বল রাখতে হবে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের গতিময়তা ফিরিয়ে আনার জন্য তরুণদের উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।’ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন দিলারা হাফিজ, হাকিম আরিফ, আঁখি সিদ্দিকা এবং জয় শাহরিয়ার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মোহাম্মদ সাদিক, কামরুল হাসান, সাজ্জাদ আরেফিন, টিমুনী খান রীনো, কৌমুদী নার্গিস। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আফতাব আহমেদ মাহাবুব, পলি পারভীন, কাজী মদীনা। ছিল সুলতানা আক্তারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ এবং দীপ্তি রাজবংশীর পরিচালনায় ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’-এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, মাহবুবা রহমান, সম্পা দাস, ডা. তাপস বোস, শহীদ কবীর পলাশ, আফরিদা জাহিন জয়ীতা। অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিন আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্র’য়ারি) মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফরিদ আহমেদ দুলাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহমুদ কামাল, হেনরী স্বপন, নজিবুল ইসলাম এবং সাজ্জাদ আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অনীক মাহমুদ।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ