ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯, ১ রমজান ১৪৪৪

আজ বসন্তের রঙে ভালোবাসার দিন

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১০

আবারও এলো বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস একসঙ্গে জোড় বেঁধে। সেই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গানে লিখেছিলেন, ‘আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি’— অনেকটা সে রকম। আজ মঙ্গলবার পহেলা ফাল্গুন, ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। আর মনের মন্দিরে প্রিয়জনের নামটি ভালোবেসে লেখার দিনটিও আজকেই-১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

বসন্ত যৌবনের দূত, নব জীবনের প্রতীক। ঋতুরাজ বলে তার খ্যাতি আবহমানকাল থেকে। শীতের ঘনঘোর কুয়াশায় আবছা হয়ে আসা দিগন্তরেখা, কনকনে হাওয়ায় রুক্ষ হয়ে ওঠা মৃতপ্রায় প্রকৃতিতে বসন্ত ফিরিয়ে আনে নতুন কুঁড়ির উদ্যম। পুষ্প-পত্রপল্লবে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে নিসর্গ।

আবার রবীন্দ্রনাথের কথার ধার করেই বলতে হয়, ‘হেরো পুরানো প্রাচীন ধরণি হয়েছে শ্যামলবরণী/ যেন যৌবনপ্রবাহ ছুটেছে কালের শাসন টুটাতে...মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’ প্রকৃতির এ নবজাগরণের প্রভাব পড়ে মানুষের হূদয়ে। চিত্ত আকুল হয় প্রিয় অনুভবে, ব্যাকুল হয় প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে। আবেগ উথলে ওঠে গহন স্বরে হূদয়ের গোপন গভীর না-বলা কথাটি বলতে। আজ তো সেই হূদয়ের দুয়ার খুলে দেয়ার দিন।

রুক্ষ, রিক্ত, হিমেল দিনের অবসান ঘটিয়ে বসন্ত আসার কথা থাকলেও দেশ থেকে এখনও শীত পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। তবুও আজ যেন কিসের শিহরিত স্পর্শ, অবাক ছোঁয়া, যেন সোঁদা মাটি আর বহেরা ফুলের গন্ধ মেশানো। পুরো প্রকৃতিতে চলছে ‘মনেতে ফাগুন এলো..’ আবহ। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালি তরুণ মনে লাগে দোলা। হূদয় হয় উচাটন। ‘ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালো..’ কবিগুরুর এ পুলকিত পিক্তমালা বসন্তেই কি সবার বেশি মনে পড়ে? কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে, তুমি আসবে বলে...।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘ফাগুন এলো বুঝি মহুয়া-মালা গলে/চরণ-রেখা তার পিয়াল-তরুতলে/পরাগ-রাঙা চেলি অশোক দিল মেলি’। বসন্ত বাতাসে পুলকিত ভাটিবাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম গেয়ে ওঠে, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...’।

বসন্তে বন্দনা করে একটি পিক্তও লেখেননি, এমন বাঙালি কবি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঋতুরাজ বসন্তের দিনগুলো অপার্থিব মায়াবী এক আবেশ ঘিরে রাখবে বৃক্ষ, লতা, পাখ-পাখালি আর মানুষকে।

বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল।

বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। তবে এখন শহরের যান্ত্রিকতার আবেগহীন সময়ে বসন্ত যেন কেবল বৃক্ষেই শোভিত হয়, মানুষের আবেগে নাড়া দেয় কম।

পশ্চিমা রীতির ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসও বেশ কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশেও ঘটা করে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম এ দিনটি বেছে নিয়েছে তাদের মনের মানুষের কাছে প্রণয়ের কথা নিবেদনের জন্য।

উপহার দেয়া, একসঙ্গে বাইরে ঘুরে বেড়ানো, কোথাও খেতে যাওয়া— অতঃপর সেই পরম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত, সেই চিরপুরাতন আবেগের চিরকালের নতুন কথাটি জানিয়ে দেয়া— আমি তোমায় ভালোবাসি। এই তো, ভালোবাসায় বন্দি হতে পারলে কে আর তা থেকে মুক্তি পেতে চায়। আজ বাসন্তী শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত নানা বয়সি নর-নারী ফুল নিয়ে পথে নামবে।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে স্মরণে রেখে ভালোবাসা দিবস প্রবর্তিত হলেও দিবসটি এখন তরুণ-তরুণীর ভালোবাসার প্রস্তাব জানানোর দিনে পরিণত হয়েছে। অনুরাগতাড়িত প্রেমিক-হূদয় এফোঁড়-ওফোঁড় হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়।

হূদয় গহিনে তারাপুঞ্জের মতো ফুটবে চণ্ডীদাসের অনাদিকালের সুর, ‘দুঁহু তার দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া...।’ গল্প, কবিতা, গান আর উপন্যাসে, আখ্যানে-উপাখ্যানে আর মানুষের মুখে মুখে যুগ-যুগান্তর ধরে ভালোবাসার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা খুঁজে ফিরেছে মানুষ। কেননা, ভালোবাসাই ধ্রুব।

ভালোবাসা দিবস কবে থেকে, কীভাবে শুরু হয়েছে— ইতিহাসের পাতায় তা নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। এগুলোর মধ্যে বহুল প্রচলিত কাহিনিটি হচ্ছে, রোমান পাদ্রি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুদণ্ড দেন রোমের দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তিনি কারাগারে বন্দি থাকার সময় ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিত। বন্দি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন চিকিৎসা করে জেলারের মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এভাবে মেয়েটির সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। মারা যাওয়ার আগে মেয়েটিকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানান, ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন।’ অনেকে মনে করেন, এ সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন। আরও একজন ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে।

যুদ্ধের জন্য দক্ষ সৈনিক সংগ্রহের জন্য রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস যুবকদের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু তরুণ ভ্যালেন্টাইন নিয়ম ভঙ্গ করে প্রেম ও বিয়ে করেন। ফলে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।

বসন্ত আর ভালোবাসার মিশেলের এমন দিনকে বরণ করার লক্ষ্যে শাহবাগের ফুলের দোকান আর আজিজ মার্কেটের শাড়ি আর পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে লক্ষ করা যাচ্ছে উপচেপড়া ভিড়। বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলাতে নামবে ঢল।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বসন্তের উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। একই স্থানে বিকাল ৪টায় দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান রয়েছে। উত্তরার ৩নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি রোড বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ ও পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কেও বিকালে রয়েছে অনুষ্ঠান। শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে বিকাল ৪টায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ