নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
শীতের প্রকোপ কাটিয়ে আসছে উষ্ণতা। শুকনো পাতা ঝরে গিয়ে গাছে গাছে গজাচ্ছে নতুন পাতা। কচি পাতার ফাঁক গলে কোকিলের কুহু কুহু ডাক জানান দিচ্ছে— কাল বসন্ত। পহেলা ফাল্গুন— জীবনকে রাঙিয়ে দেয়ার দিন। এ দিনটি আরও একটি কারণে বিখ্যাত। প্রিয়তমা কিংবা নিজের পছন্দের মানুষকে ভালোবাসার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান দেয়ারও দিন কাল। দিনটিতে একজন আরেকজনের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে ভালোবাসার বার্তাসহ কার্ড, ফুল বা চকলেট পাঠিয়ে থাকেন।
এছাড়া আবহমান বাংলার চলমান একটি উৎসব ‘বসন্ত উৎসব’। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এ উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করে থাকেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি চলে আসছে।
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদ্যাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব নিয়মিত আয়োজন করে আসছে। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ এ দিনকে বরণ করতে চারুকলার বকুলতলায় এবং ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে এ দিন বসন্ত উৎসব পালন করা হয়।
বসন্তের এই দিনে ফুলের সৌরভে মেতে ওঠে চারপাশ। বসন্তের রং বাসন্তীকে সঙ্গে নিয়েই হয় দিনের শুরু। গাঁদা ফুলের রঙেই সাজবে তরুণীরা। পরবে বাসন্তী রঙের শাড়ি। খোঁপায় গুজবে ফুল, মাথায় টায়রা আর হাতে পরবে কাচের চুড়ি। তরুণরাও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে নামবে বাংলার পথেঘাটে। বসন্ত মানেই— জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায়—
‘বসন্ত এলো এলো এলোরে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে
মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে।’
কিংবা কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়, ‘হে কবি নীরব কেন, ফাগুন যে এসেছে ধরায়/ বসন্তে বরিয়া তুমি লবে নাকি তব বন্দনায়?
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস এবং বসন্ত উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করে বাহারি রঙের ফুল। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রঙের গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, অশোক, হিমঝুরি, ইউক্যালিপটাস, রক্তকাঞ্চন, কুরচি, কুসুম, গামারি, গ্লিরিসিডিয়া, ঘোড়ানিম, জংলিবাদাম, জ্যাকারান্ডা, দেবদারু, নাগেশ্বর, পলকজুঁই, পলাশ, পাখিফুল, পালাম, বুদ্ধনারিকেল, মণিমালা, মহুয়া, মাদার, মুচকুন্দ, রুদ্রপলাশ, শাল, শিমুল, স্বর্ণশিমূল, কৃষ্ণচূড়া।
জানতে চাইলে শাহাবাগ ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, এ বিশেষ দিনগুলোতে একটু বেশি বেচা-কিনি হয়। শাহবাগে ৫০টির মতো ফুলের দোকান রয়েছে। বিশেষ উৎসবগুলোতে প্রতি দোকানে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ফুল বিক্রি হয়। এ হিসেবে এবারও কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তিনি আরও বলেন, প্রতি দোকানে এরই মধ্যে ২৫-৩০ ট্রাক করে ফুলের অর্ডার দিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ সময়ে একটা গোলাপ ১০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়। উৎসব উপলক্ষে প্রতিটি গোলাপ ৮০ থেকে ৯০ টাকায়ও বিক্রি হবে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পর্যন্ত শাহবাগ, ফার্মগেট, আগারগাঁওয়ে ৩০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ