নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও থেমে নেই তুরস্কের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ। বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকর্মীরা সমন্বিতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধার অভিযান। তবে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ধ্বংসস্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে লাশের গন্ধ। প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৪১ হাজার।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের কাহারমানমারাস শহরে আঘাত হানা ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দেয় তুরস্ক ও সিরিয়ার বিশাল একটি অংশকে। শক্তিশালী ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এখনও বাড়ছে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই দেশে ৪১ হাজারেরও বেশি মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আল জাজিরার জানিয়েছে, তুরস্কে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৪১৮ জন। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ৮ হাজার মানুষকে। সিরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ৮০০ জন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৪৫ সেকেন্ডের ভূমিকম্পের পর আরও ২ হাজার ৩০০’র বেশি আফটারশক হয়েছে বলে জানিয়েছে ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা। এতে যেসব ভবন এখনও অক্ষত আছে সেগুলোর স্থায়িত্ব নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এর আগে ১৯৩৯ সালে তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভূমিকম্পের সাত দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও ধ্বংস্তূপের নিচ থেকে মিলছে প্রাণের সন্ধান। শত বাধা, কষ্ট উপেক্ষা করে উদ্ধারকারীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত কিংবা মৃত সবাইকে বের করে আনতে। তবে এখনও হাজার হাজার মানুষ চাপা পড়ে থাকায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বা তারও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের। এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে সাময়িক ভিসা দেয়ার কথা জানিয়েছে জার্মানি। দেশটিতে বসবাসরত অভিবাসীদের ক্ষতিগ্রস্ত আত্মীয়দের খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসেবা দিতে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে বার্লিন।
ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে বেশ কিছু লুটপাটের ঘটনায় সিরীয় শরণার্থীদের জড়িত থাকার অভিযোগের পর তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তুরস্কের নাগরিকরা। তুরস্কের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত গ্রাম ও শহরগুলোর একাধিক বাসিন্দা সিরীয়দের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ও বাড়িতে চুরির অভিযোগ এনেছেন। টুইটারে ‘আমরা সিরীয়দের চাই না’, ‘শরণার্থীদের ফেরত পাঠাও’, ‘আর স্বাগত নয়’, এমন ভূরি ভূরি সিরীয়বিরোধী স্লোগান দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভূমিকম্পে উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া সিরীয় শরণার্থীরা বলছে, তাদের জরুরি শিবিরগুলো থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্ণবাদী অপবাদের মুখোমুখি হওয়া স্বদেশিদের জন্য তুরস্কের মেরসিন শহরে একটি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছেন এক সিরীয় নাগরিক। ‘আমরা উদ্ধারকাজ চলছে এমন স্থানগুলোতে যাওয়া বাদ দিয়েছি, কারণ লোকজন যখনই আমাদের আরবি বলতে শোনে, তখনই চিৎকার করতে করতে তেড়ে আসে ও ধাক্কা দিতে থাকে।’ ‘তারা সব সময় আমাদের লুটপাটের জন্য দোষারোপ করছে, কিন্তু এগুলো শুধু বিবাদ সৃষ্টির জন্য,’ বলেছেন পরিচয় প্রকাশে রাজি না হওয়া এক সিরীয়।
ভয়াবহ এই ভূমিকম্প লাখ লাখ মানুষকে গৃহহীন করেছে; দুর্গত কিছু কিছু এলাকার বাসিন্দাদের খাবার ও জরুরি আশ্রয়ের জন্য কয়েক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেক এলাকার বাসিন্দা ও ত্রাণকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট হয়েছে বলে খবর দিয়েছেন; নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কথা জানিয়ে একাধিক বিদেশি ত্রাণদল তাদের কাজ স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধও রেখেছিল। লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৮ জনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছিল তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয়। আটকদের জাতীয়তা বা তাদের কোথা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তা বলেননি তারা। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান লুটপাটকারীদের কঠোর সাজা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। বাড়ছে উত্তেজনা।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশ ছেড়ে পালানো শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিল তুরস্ক, দেশটিতে এখন প্রায় ৪০ লাখ সিরীয় শরণার্থীর বাস। এদের অধিকাংশই তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বসবাস করছেন। ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর গাজিয়ানতেপে প্রায় ৫ লাখ সিরীয় শরণার্থীর বাস, যা শহরটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। ভূমিকম্পে সিরিয়ার যেসব শহর ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গাজিয়ানতেপ তার অন্যতম। সিরীয়দের প্রতি তুর্কিদের ক্ষোভ নতুন নয়, কিন্তু ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতি এই উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। তীব্র অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যেও এই সিরীয় শরণার্থীদের রাখতে গিয়ে ২০১১ সাল থেকে তুরস্কের ৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি খরচ হয়েছে। অনেক তুর্কি নাগরিক সিরীয়দের দেখছেন সস্তা শ্রমিক হিসেবে, যারা তাদের চাকরি ও প্রাপ্ত সেবায় ভাগ বসাচ্ছেন।
সিরীয় শরণার্থীদের ইস্যুটি চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা। ‘সিরীয়রা তাদের খালি ব্যাকপ্যাক নিয়ে আশপাশে হাঁটছে এবং দোকান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে ব্যাকপ্যাকে ভরছে। এখানে অনেকগুলো লুটের ঘটনা ঘটেছে,’ বলেছেন দন্ত চিকিৎসক আহমেত, তিনি যে ভবনে সার্জারি করতেন সেই ভবনের ধ্বংসস্তূপের কাছে বসেছিলেন তিনি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ