নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
‘বিগিনার্স লাক’ বলে একটা শব্দ আছে ফাটকা খেলার দুনিয়ায়। শুরুয়াতি সৌভাগ্য। সোজা কথায় যার মানে, ভাগ্যের খেলায় প্রথমবার যোগ দিলে না-কি কিছু না কিছু লাভ হবেই। ১৮ বছরের জুলিয়েটের সঙ্গেও সম্ভবত তা-ই হল। সাধারণ কলেজছাত্রী থেকে একটি আস্ত বিমানের মালিক! নিমেষে নিজের জীবনকে এভাবেই বদলে যেতে দেখলেন ওই অষ্টাদশী। সদ্য কৈশোর পেরিয়ে সাবালক হয়েছেন জুলিয়েট ল্যামোর। কানাডার বাসিন্দা এ ছাত্রী জীবনে প্রথমবার লটারির টিকিট কেটেছিলেন। আর প্রথমবারেই লক্ষ্যভেদ। লটারিতে এ তরুণী জিতেছেন ৪ কোটি আশি লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে যা দাঁড়ায় ২৯০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
কানাডার লটারির ইতিহাসে এত অল্প বয়সে এমন বিপুল টাকার লটারি আগে কেউ জেতেননি। আবার জুলিয়েটও নাকি পুরস্কারের অঙ্ক না দেখেই কিনেছিলেন টিকিট। একখানা আইসক্রিম কিনতে গিয়ে ওই লটারির টিকিট কেটে ফেলেন তিনি। কিছুদিন আগেই জুলিয়েটের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ৪ কোটি আশি লাখ ডলারের চেক। মঞ্চে দাঁড়িয়ে চেক হাতে নিয়ে সে দিনের ঘটনা শুনিয়েছেন অষ্টাদশী। জুলিয়েট জানান, ঘটনাটি যে দিন ঘটে তার দিন কয়েক আগেই ১৮ বছরের জন্মদিন পালন করেছেন তিনি। কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন আগেই। হাতখরচ চালানোর জন্য একটি ওষুধের দোকানে সেলসগার্লের কাজ শুরু করেছেন দিন কয়েক আগে। যদিও সে দিন তার কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া হয়নি। জুলিয়েটের কথায়, ‘সে দিন আমি বাড়িতেই ছিলাম। বাবার বন্ধুরা এসেছিলেন বাড়িতে। বাবা বেরিয়েছিলেন দাদুর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে। বন্ধুদের আসার খবর পেয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন।’
এরপর দাদুর সঙ্গে দেখা করার দায়িত্ব দেয়া হয় জুলিয়েটকে। জুলিয়েট বেরিয়ে পড়েন। দাদুর জন্য আইসক্রিম কিনতে একটি দোকানের সামনে দাঁড়ান। ১৮ বছরের ছাত্রী জানিয়েছেন, ‘দাদু কী আইসক্রিম খাবে, জানতে ওকে ফোন করেছিলাম। শুনে উনি বললেন, ‘আরে তুমি তোমার জমানো টাকা আমার ওপর খরচ করবে কেন। ১৮ বছর হয়েছে, একটা লটারির টিকিট কেটে ফেল।’ সে দিন দাদুর কথাতেই লটারির টিকিট কাটেন জুলিয়েট। আগে কখনও কাটেননি বলে দোকানদারকেই বলেছিলেন টিকিট বেছে দিতে। তবে সেই টিকিট যে তার জীবন বদলে দিতে পারে ভাবতে পারেননি।
বাবার কোনো স্থায়ী চাকরি নেই। স্বনিযুক্ত আর্থিক পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন। মা সংসার সামলান। জুলিয়েট তাদের একমাত্র কন্যা। পড়াশোনায় মেধাবী। ছোট থেকেই চিকিৎসক হওয়ার শখ। তার পড়াশোনায় কোনো খামতি রাখেননি বাবা-মা। সেই মেয়ের স্বপ্নপূরণের বয়স না হোক আপাতত তিনি বিপুল সম্পত্তির মালিক। কিন্তু লটারি জেতার মুহূর্তের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? কাকে প্রথম ফোন করেছিলেন জুলিয়েট?
কানাডার কনিষ্ঠতম লটারি বিজেতা জানান, টিকিট কেটে ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। পার্সেই পড়েছিল সেই টিকিট। এক রোববার ওষুধের দোকানে কাজ করতে করতে আচমকাই সহকর্মীদের উত্তেজিত কথাবার্তায় জুলিয়েট জানতে পারেন, তার এলাকারই কেউ জ্যাকপট জিতেছেন। টিভিতে খবরটি ঘোষণা করার পরই সহকর্মীদের মধ্যে যারা টিকিট কেটেছিলেন, তারা নম্বর মেলাতে শুরু করেছিলেন। সাহায্য করছিলেন ওষুধের দোকানি। জুলিয়েট তাকে জানান, তার কাছেও একটি টিকিট আছে। জুলিয়েটের টিকিটের শেষ তিনটি নম্বর ছিল ৬/৪৯। সেই নম্বর মেলাতেই দেখা যায় জুলিয়েটই জিতেছেন লটারি।
জুলিয়েট জানান, পুরস্কারের অর্থ দেখে দু’হাতে মাথা ধরে মাটিতে বসে পড়েন ওই দোকানি। এরপর মাকে ফোন করে খবরটা জানান তিনি। জুলিয়েটের মা অবশ্য ঘটনাটি বিশ্বাসই করেননি। ফোনে সুখবর দিয়ে জুলিয়েট তার মাকে বলেছিলেন, ‘মা আমি লটারি জিতেছি!’ জবাবে তার মা মুখের ওপরেই বলে দেন, ‘না, তুমি জেতোনি, জিততেই পারো না।’ শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন জুলিয়েট। তবে তিনি জানিয়েছেন, তার মা ওই খবর জানার পরও কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরতে দেননি তাকে। নিজেই জুলিয়েটের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। টিকিটটি নিয়ে বলেছিলেন, বিকেল পাঁচটায় কাজের সময় শেষ হলে তবেই বাড়ি ফিরতে। কাঁপা হাতে লটারির টিকিটে সই করে মাকে দিয়েছিলেন জুলিয়েট। পরে সহকর্মীরাই তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে, তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তারপর স্বপ্নের উড়ানে চড়ে লটারির পুরস্কার নিতে মঞ্চে আসে জুলিয়েটের।
জুলিয়েট যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার এ অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, তখন তার সামনে দর্শকের ভিড়ে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছিলেন মা। দর্শকও ছাত্রীর জীবন বদলে যাওয়ার প্রতি পরতের বিবরণ শুনে অবাক হয়ে হাততালি দিচ্ছিলেন। জুলিয়েট বলেন, ‘তবে লটারি জেতার মূল কৃতিত্ব দাদুরই। উনি না বললে টিকিট কাটাই হতো না আমার।’
জুলিয়েটের কাছে শেষ প্রশ্ন ছিল, এত অর্থ নিয়ে কী করবেন? মঞ্চে দাঁড়িয়ে জুলিয়েট বলেছিলেন, ‘এখনও ভাবিনি। তবে পরিবারের কথা মাথায় রেখেই কিছু করব।’ তবে সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি দেরি করেননি জুলিয়েট। লটারি জেতার পর লন্ডনে একটি বাংলো কিনেছেন ছাত্রী। যার দাম বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। পরিবারের জন্য কিনেছেন পাঁচ-পাঁচটি মার্সিডিজ গাড়ি। যার এক একটির মূল্য প্রায় আড়াই ২ কোটি টাকা। ১০০ কোটি খরচ করে একটি ব্যক্তিগত জেট বিমানও কিনেছেন জুলিয়েট। তার পরও তার হাতে যা রয়ে গিয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় তার পরিমাণ পৌনে দু’শ কোটি টাকা। জুলিয়েট জানান, এ অর্থ তিনি রেখেছেন নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য। বাবার সাহায্য নিয়ে ওই অর্থ বিনিয়োগ করবেন তিনি। একইসঙ্গে কানাডার নিউ অন্টারিওর শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়ারও ইচ্ছা রয়েছে তার। আনন্দবাজার।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ