নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
ডলফিনের নাম শুনলে আমাদের মনে হাসিখুশি আদুরে এক প্রাণীর কথা মনে পড়ে। তারা নানারকম খেলায় পটু এবং দারুণ বন্ধু স্বভাবের। মানুষের অন্যতম প্রিয় এ প্রাণীকে নিয়ে আমাদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। বিজ্ঞানীদের দাবি, মানুষের পর ডলফিনই সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্কও আছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী বলেছেন, ডলফিনের সদা হাস্যমুখ দেখে হয়তো আমরা বিভ্রান্ত হচ্ছি! আবার পানিতে বাস করে বলে অনেকেই একে মাছের প্রজাতি মনে করে থাকে। তবে সত্যতা হচ্ছে, ডলফিন কিন্তু কোনো মাছ নয়, এরা স্তন্যপায়ী। এরা মাছের মতোই পানিতে বসবাস করে, সাঁতার কাটে কিন্তু মাছের মতো ডিম পাড়ে না। মা ডলফিন ছোট্ট বাচ্চা ডলফিনের জন্ম দেয়। সেই ছোট্ট ডলফিন মায়ের দুধ খেয়ে বড় হতে থাকে। আর এজন্যই এদের স্তন্যপায়ী বলা হয়ে থাকে। অনেকের ধারণা, একসময় ডলফিন ডাঙায় বাস করত। পরবর্তী সময়ে ডাঙায় প্রতিকূল পরিবেশ আর জলে খাদ্যের প্রাচুর্যতা দেখে এরা পানির সঙ্গেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে। যদিও এর পেছনে খুব একটা যুক্তিসংগত কারণ নেই। ডলফিনদের অজানা জীবন, লাইফস্টাইল ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
ওয়ার্ল্ডওয়াইডলাইফ.ওআরজি এর তথ্য মতে, পানির উপরিভাগের মাছের তুলনায় নিচের মাছগুলো অনেক বেশি নাদুসনুদুস হয়ে থাকে। কারণ তলায় খাদ্যের জোগান অনেক বেশি; খাদ্যের জন্য তাই দৌড়াদৌড়ি করতে হয় কম। বোতল-নাক ডলফিনদের আবার এসব মোটাসোটা মাছগুলোর ওপর বেজায় লোভ। জলের তলায় নাক দিয়ে এই মাছগুলোকে বালির ওপরে খুঁজে বেড়ায় এরা। এতে যে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয় না, তা নয়। মাঝেমধ্যে রাগী গোবদা গোবদা কাঁকড়ার সামনে পড়ে যায় এরা। তখন অবস্থা সঙ্গীন হয়ে ওঠে। ডলফিনগুলোর নাকের ওপরে ধারালো দাঁড়া দিয়ে কামড় বসায় ওগুলো। সঙ্গে আছে সমুদ্রের তলদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা আকারের ধারালো পাথর। তাতে গুঁতো খেয়ে নাকের বারোটা বাজা অসম্ভব কিছু নয়। এই ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য এরা ব্যবহার করে সামুদ্রিক স্পঞ্জ। ওগুলোকে নাকের মাথায় আটকে রেখে দিব্যি মাছ খুঁজে বেড়ায় ওরা। কাঁকড়ার কামড় আর পাথরের ঘষা সব স্পঞ্জের ওপর দিয়েই যাক!
ডলফিনরা যেখানে ঘুরে বেড়ায়, তার আশপাশেই হাঙর দেখা যায়। কখনো কখনো ক্ষুধার্ত হাঙর ডলফিনকেও তাড়া করতে ছাড়ে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাঙ্গরের কপালে কিছুই জোটে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাঙ্গর কামড় বসায় বটে, কিন্তু বিশেষ সুবিধে করতে পারে না। বড়জোর এক খাবলা মাংস উঠিয়ে নেয়। বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে লক্ষ করেছেন, হাঙ্গরের আক্রমণে আহত হলেও ডলফিনরা খুব বেশি গা করে না। যেন এটা এদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এমনকি তাদের আচরণে ব্যথার চিহ্নও নেই। আশ্চর্য বিজ্ঞানীরা দুইটি ডলফিনকে পর্যবেক্ষণে রাখলেন। তাদের গায়ে হাঙ্গরের আক্রমণে বাস্কেটবলের মতো সাইজের দুইটি ক্ষত তৈরি হয়েছিল। সপ্তাহখানেকের ভেতরে তাদের ক্ষত ঠিক হয়ে গেল এমনভাবে, যেন ওখানে কোনো ক্ষত ছিলই না। ক্ষততে কোনো ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনও হয়নি। গবেষণায় বেরিয়ে এলো, এই প্রাণীগুলোর শরীরে কোনো ক্ষত তৈরি হলে সেখানে একধরনের অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক রাসায়নিক ক্ষরিত হয়। ফলে সমস্ত ব্যাপারটা উপেক্ষা করে চলতে পারে!
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ