ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯, ২৮ শাবান ১৪৪৪

৩০০ টাকা নিয়ে ঘর ছেড়ে এখন কোটিপতি তরুণী

প্রকাশনার সময়: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৫:১৪ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৫:২১
কোটিপতি চিনু কালা। ছবি : সংগৃহীত

পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা। রাগের মাথায় ব্যাগে ৩০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন মুম্বাইয়ের চিনু কালা। মাথার ওপর ছাদ ছিল না বলে মেট্রো স্টেশনে রাত কাটিয়েছেন। বর্তমানে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক চিনু।

১৫ বছর বয়সে ঘরছাড়া হয়েছিলেন চিনু। তখন দশম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। স্কুলে যাতায়াতের সময় তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, সবাই ব্যাগপত্র নিয়ে স্টেশনের দিকে যান। তাই তার ধারণা ছিল যে, রেলস্টেশনে বুঝি থাকা যায়। বাড়িতে এক দিন তুমুল অশান্তি হওয়ায় একটি ছোট ব্যাগে কয়েকটি জামাকাপড় নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান চিনু। তখন তার ব্যাগে মাত্র ৩০০ টাকা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা মুম্বই রেলস্টেশনে চলে গিয়েছিলেন তিনি। দুদিন মুম্বই স্টেশনে কোনো রকমে দিন কাটানোর পর চিনু বুঝতে পারেন যে, স্টেশনে সারা জীবন কাটান যায় না। সেই মুহূর্তে তার আলাপ হয় এক নারীর সঙ্গে। ওই নারীই তাকে সেলসগার্লের কাজ দেন।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছুরি এবং কোস্টারের সেট বিক্রি করতেন চিনু। দিনপ্রতি ২০ টাকা রোজগার করতেন তিনি। সে টাকায় কোনো মতে এক বেলার খাবার জুটত তার। এক সাক্ষাৎকারে চিনু বলেন, ‘১০০টি বাড়িতে ধাক্কা দিলে মাত্র দু-তিনটি বাড়ির দরজা খুলত। অনেকে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিতেন।’

দু’বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করতেন তিনি। ২০০০ সালে একটি দোকানে কর্মীর কাজে যুক্ত হন চিনু। ছ’মাস দোকানে কাজ করার পর একটি রেস্তরাঁয় কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০৪ সালে বিয়ে করার দু’বছর পর রূপটান শিল্পী হওয়ার শখ হয় চিনুর। সেই কারণে ২০০৬ সালে মুম্বইয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি।

প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় চিনু খবর পান যে, ভারত জুড়ে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৭ সালে তিনি প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম পাঁচে জায়গা করে নেন। তার পর চিনু মডেলিং জগতে পা রাখেন। মডেলিং পেশায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন তিনি। মুম্বই থেকে তার পর বেঙ্গালুরু চলে যান চিনু।

২০০৮ সালে নিজস্ব সংস্থা গড়ে তোলেন চিনু। কিন্তু তার মন পড়েছিল অন্য দিকে। মডেলিং করার সময় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাজসজ্জার জন্য গয়নাগাটির ভূমিকা কতখানি। পোশাকের সঙ্গে মানানসই গয়না তৈরি করার কথা ভাবেন চিনুর। ২০১৪ সালে বেঙ্গালুরুর একটি শপিং মলে গয়না বিক্রির ছোট দোকান খুলে ফেলেন চিনু। এ ব্যবসা শুরু করতে ৩ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন তিনি। চিনু প্রথমে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, তার ব্যবসা কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই ব্যবসা লাভের মুখ দেখতে শুরু করে।

‘দ্য উইকেন্ড লিডার’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে চিনু বলেন, ‘আমার ব্যবসা গোড়াতেই এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে, আমি খুব সহজেই দিনে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারতাম।’ তবে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর মহামারির সময় চিনু সব থেকে বেশি লাভ করেছেন বলে দাবি করেন। এরপর নিজের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে ফেলেন চিনু। তিনি ক্রেতাদের সুবিধার জন্য অনলাইন মাধ্যমে গয়না কেনাকাটার সুযোগ এনে দেন।

অতিমারির সময়েই প্রচুর লাভ করেছিলেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে যে মেয়েটি নিজের জীবন নিয়ে দিশাহীন হয়ে রেলস্টেশনে বসেছিলেন, বর্তমানে তার অনুরাগীদের সংখ্যা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। চিনুর ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীর সংখ্যা নব্বই হাজার ছুঁইছুঁই। ২০১৮ সালের মধ্যে চিনু সারা ভারত জুড়ে তার সংস্থার পাঁচটি দোকান খুলে ফেলেছেন। তার মধ্যে দুটি বেঙ্গালুরুতে, দুটি হায়দরাবাদে এবং একটি কোচিতে। চিনুর পাশাপাশি তার স্বামীও সংস্থার ডিরেক্টর পদে যুক্ত রয়েছেন। চিনুর ইচ্ছা, ভারতে ‘ফ্যাশন জুয়েলারি’র বাজারে মোট ২৫ শতাংশের দখল নেয়ার। সেই সিঁড়িতেই ধাপে ধাপে চড়ছেন চিনু কালা। আনন্দবাজার।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ