শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯

বিশ্বের দীর্ঘতম বাস রুটের ইতিহাস

প্রকাশনার সময়: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১১ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৪

কলকাতা শহর থেকে প্রতিদিন হাজারও বাস বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দেয়। তার বেশিরভাগই রাজ্যের অন্যান্য জেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে যায়। কিন্তু এক সময় নাকি গঙ্গা তীরবর্তী কলকাতা থেকে সরাসরি বাস ছাড়া হতো টেমস তীরবর্তী লন্ডনের উদ্দেশে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ ঘটনা অনেকে সত্যি বলেই মনে করেন। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৫০-এর দশকে চালু হয়েছিল লন্ডন থেকে কলকাতাগামী এবং কলকাতা থেকে লন্ডনগামী এ বিলাসবহুল বাস পরিষেবা। লন্ডন থেকে কলকাতাগামী এ ডাবল ডেকার বাসটির নাম দেয়া হয়েছিল ‘অ্যালবার্ট’। যে সংস্থার তরফ থেকে এ বাস চালু করা হয়েছিল তার নাম ছিল ‘অ্যালবার্ট ট্যুর সার্ভিস’। মনে করা হয়, এটিই নাকি ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম রুটে চলা বাস। ১৯৫৭ সালের ১৫ এপ্রিল লন্ডন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল অ্যালবার্ট।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, লন্ডন থেকে কলকাতা আসার টিকিটের মূল্য ছিল প্রায় ১৬ হাজার টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)। তবে কলকাতা থেকে লন্ডন ফিরে আসার টিকিটের মূল্য ছিল ৯ হাজার টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)। পরে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে এ বাসের ভাড়া বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৯ হাজার টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)।

১৯৫৭ সালে পরিষেবা চালুর প্রথম দিনে নাকি ২০ জন যাত্রীকে নিয়ে লন্ডন থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল এ বাস। ১৩ জন কলকাতায় নেমে গেলেও সাতজন যাত্রী (দুই নারী এবং পাঁচজন পুরুষ) আবার ওই বাসেই লন্ডনে ফিরে আসেন বলে শোনা যায়।

লন্ডন থেকে ছাড়া প্রথম বাসটি কলকাতায় পৌঁছেছিল ৫ জুন। অর্থাৎ, প্রায় ৫০ দিন পর। বাসটি ইংল্যান্ড থেকে বেলজিয়াম এবং সেখান থেকে পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ করত। ভারতে প্রবেশের পর নয়াদিল্লি, আগরা, এলাহাবাদ, বারানসি হয়েই নাকি সেই বাস কলকাতায় পৌঁছাত। সে সময় এ যাত্রাপথ পরিচিত ছিল ‘হিপি রুট’ নামে। প্রচলিত আছে, পুরো যাত্রাপথে বাসটিকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রপথও পেরোতে হতো জাহাজে করে। যাত্রীদের সুবিধার্থে বাসটিতে যাত্রীদের ঘুমোনোর জন্য বাঙ্ক এবং ঠান্ডা থেকে বাঁচতে হিটারের ব্যবস্থা ছিল। সব সরঞ্জাম এবং সুযোগ-সুবিধাসহ একটি রান্নাঘরও ছিল বাসের মধ্যে।

প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য বাসের ওপরের ডেকে আলাদা বন্দোবস্ত করা ছিল। রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রীদের আমোদ প্রমোদের জন্য রেডিও এবং একটি মিউজিক সিস্টেমেরও ব্যবস্থা ছিল। ভারতে প্রবেশ করার পর যাত্রীদের বারানসির ঘাট, তাজমহলসহ ভারতের একাধিক পর্যটন ক্ষেত্রও নাকি ঘুরিয়ে দেখাত অ্যালবার্ট ট্যুর সার্ভিস। যাতায়াতের পথে তেহরান, সালজবার্গ, কাবুল, ইস্তাম্বুল এবং ভিয়েনায় কেনাকাটার অনুমতিও দেয়া হতো যাত্রীদের।

বেশ কয়েক বছর পরিষেবা দেয়ার পর বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে বাসটি ব্রিটিশ পর্যটক অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট কিনে নেন। তিনি এটিকে একটি ভ্রাম্যমাণ ঘর হিসেবে পুনর্নিমাণ করেন। পরে নাকি আবার এর পরিষেবা চালু হয়। ১৯৬৮ সালের ৮ অক্টোবর সিডনি থেকে ভারত হয়ে লন্ডনে যাত্রা শুরু করে অ্যালবার্ট। সিডনি থেকে লন্ডনে পৌঁছাতে বাসটি প্রায় ১৩২ দিন সময় নিত। বাসটি ইরান হয়ে ভারতে পৌঁছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া হয়ে সিঙ্গাপুরে যেত। সিঙ্গাপুর থেকে, বাসটিকে জাহাজে করে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে নিয়ে যাওয়া হতো এবং সেখান থেকে সড়কপথে এটি সিডনির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করত বলে প্রচলিত আছে। আগের মতোই বাসে সব আধুনিক সুযোগসুবিধা রাখা ছিল। ইরানের সমস্যা এবং পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণেই নাকি ১৯৭৬ সালে বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরিষেবাটি স্থায়ীভাবে শেষ হওয়ার আগে অ্যালবার্ট ট্যুর কলকাতা থেকে লন্ডন এবং আবার লন্ডন থেকে সিডনি পর্যন্ত প্রায় ১৫টি ট্রিপ সম্পন্ন করেছিল। তবে কলকাতার ইতিহাস নিয়ে চর্চাকারী হরিপদ ভৌমিক এ ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার কথায়, ‘এ রকম একটি বাস চালু হওয়ার কথা হয়েছিল বলে শুনেছি। কিন্তু তা শুরু হওয়ার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ নিয়ে কোনো নথি রয়েছে বলেও জানা নেই।’ আনন্দবাজার।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ