ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ৫ রমজান ১৪৪৪

অন্যের স্ত্রীকে চুরি উৎসব

প্রকাশনার সময়: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০৭

অন্যের স্ত্রীকে চুরি করে পালানো অতঃপর বিয়ে। এমন সব অদ্ভুত রীতি পালিত হয়ে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এমন বিয়ের রীতিকে উৎসব মনে করা হয়। শুধু বউ চুরিই নয় অপহরণ এমনকি ধর্ষণের মাধ্যমে বিয়েতে রাজি করানোর মতো নানা প্রথাও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলন রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে প্রাগৈতিহাসিক সময়কাল থেকেই চলে আসছে ব্রাইড কিডন্যাপিং বা বধূ অপহরণ। আফ্রিকার তিনটি দেশে পালিত হয় এমন উৎসব। প্রায়ই কনে অপহরণের নামে সেখানে ঘটে ধর্ষণের মতো ঘটনা। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের এ রীতি মেনে আসছে যুগ যুগ ধরে যাযাবর উপজাতি ওডাবে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে অন্যের বউকে চুরি করে পালায় সেখানকার পুরুষরা।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার ও চাদ। দেশ দুটির অংশে থাকা সাহারা মরুভূমিতে বাস করে যাযাবর পশুপালক উপজাতি ওডাআবে। সারা বছর এ উপজাতির মানুষরা ছোট ছোট পরিবার নিয়ে গড়া কয়েকটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় সাহারা মরুভূমির মরুদ্যানগুলোতে। পশুপালনই এদের মূল জীবিকা। ওডাআবে উপজাতির নারী ও পুরুষরা তাদের সৌন্দর্য নিয়ে ভীষণ গর্বিত। পুরুষরা মনে করে তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। এমনকি তাদের রুপচর্চায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তাই তারা সর্বদা সঙ্গে আয়না নিয়ে ঘোরে।

প্রাচীনকাল থেকেই ওডাআবে সমাজে অবাধ যৌনতার সুযোগ পান নারী ও পুরুষরা। যৌনতা নিয়ে কোনো রাখঢাকের ব্যাপার নেই উপজাতিটির মধ্যে। গোষ্ঠীপতি-শাসিত এ সমাজে একজন নারী বা পুরুষের অসংখ্য যৌনসঙ্গী থাকা স্বাভাবিক এবং সেটা ওডাআবে সমাজে দ্বারা স্বীকৃত। বিয়ের আগে ওডাআবে উপজাতির মেয়েরা যার সঙ্গে ইচ্ছা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। বিয়ের পরেও যতখুশি স্বামী রাখতে পারে। এ ওডাআবে উপজাতির কাছে বছরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মাসটি হলো সেপ্টেম্বর।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ সেপ্টেম্বর মাসে তারা পালন করে আসছে এক অদ্ভুত উৎসব, নাম ‘গেরেওল’। এ উৎসবে পুরুষরা যোগ দেয় পরের বউকে চুরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে। যৌবনবতী পরস্ত্রীরা মুখিয়ে থাকে ‘গেরেওল’ উৎসবে এসে পছন্দ করা পরপুরুষের সঙ্গে পালানোর জন্য। তাই এ উৎসবের অন্য নাম ‘বউ চুরি উৎসব’। বছরের সেপ্টেম্বরে সাহারা মরুভূমির বিভিন্ন মরুদ্যানে ওডাআবে উপজাতির হাজার হাজার নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে পালন করে গেরেওল উৎসব। তবে উৎসব কোথায় হবে তা আগে থেকে বলা হয় না। উৎসবের কিছুদিন আগে দিন ও স্থান ঘোষণা করা হয়। দূতের মাধ্যমে খবর চলে যায় মরুভূমির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওডাআবে গোষ্ঠীগুলোর কাছে। টানা সাত দিন সাত রাত ধরে চলে এ উৎসব। অন্যের বউ চুরি করার চিরাচরিত চেষ্টার সঙ্গে এ উৎসবে চলে দেদার নাচগান ও খানাপিনা।

গেরেওল উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানটি হলো, ‘ইয়াকে’ প্রতিযোগিতা। এটি হলো পুরুষদের প্রজনন নৃত্য প্রতিযোগিতা। ময়ূররা যেমন সঙ্গিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য পেখম মেলে প্রজনন নৃত্য করে, ওডাআবে উপজাতির পুরুষরাও সে রকমই একটি নৃত্য পরিবেশন করে। নৃত্যটির নাম ‘ইয়াকে’। বউ চুরির ‘গেরেওল’ উৎসবে হয় সেই ‘ইয়াকে’ নাচের প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতার কয়েকমাস আগে থেকে পুরুষরা প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের তৈরি করা শুরু করে। ওডাআবে পুরুষরা বিশ্বাস করে, তাদের সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে, তাদের চোখের ধবধবে সাদা ভাব, টিকোলো নাক আর ঝকঝকে সাদা দাঁত। প্রতিযোগিতায় নামার আগে পুরুষরা তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা রূপচর্চা করে চোখ নাক আর দাঁতের সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টা করে। লম্বা ও সুঠাম চেহারার ওডাআবে পুরুষরা প্রতিযোগিতা শুরুর আগে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে সাজে। লাল মাটি দিয়ে তৈরি করা রং মুখে মাখে। নিজেদের তৈরি করা আই-লাইনার লাগায় চোখকে সাদা দেখানোর জন্য। ঠোঁটে লিপস্টিকও ব্যবহার করে দাঁতকে ঝকঝকে সাদা দেখাতে। রোমানদের মতো খাড়া নাকগুলোর তীক্ষ্ণতা আরও বাড়ানো হয়, নাকের ওপর সাদা রেখা টেনে। মাথার চুলে বিনুনি করে, সেই বিনুনিতে পুঁতি ও কড়ি গাঁথা হয়। নিজেকে আরও লম্বা দেখাতে মাথার চুলে উটপাখির পালক গাঁথে পুরুষরা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ