শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯

ফায়ার সার্ভিসে নতুনের ছোঁয়া

প্রকাশনার সময়: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৮

‘লাইফ সেভিং ফোর্স’ নামে পরিচিত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনার প্রথম উদ্যোগ হিসেবে মিরপুরে অধিদফতরটির জন্য নতুন প্রধান কার্যালয় নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু করা হচ্ছে। আর বর্তমানে মিরপুরে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্স ফ্যাসিলিটি সাময়িকভাবে পূর্বাচলে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

এছাড়া বর্তমানে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়কে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের অন্য সব স্থাপনাসহ স্টেশনগুলো মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নামে নামজারি করার কাজ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ফায়ার স্টেশনসহ অধিদফতরের সব জমিজমা সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় করার জন্য সরকারের সঙ্গে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) চুক্তিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আরবান সেফটি বিল্ডিং বা নগরায়ণ ভবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় জাইকা ১০ তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক এ ভবন তৈরি করবে। ভবনটি ৮ রিখটার স্কেল ভূমিকম্প প্রতিরোধক হবে। বর্তমানে এটি তৈরির প্রস্তুতি চলছে।

ফায়ার সার্ভিসে কর্মরতদের জন্য মিরপুরে হাসপাতালও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে সেটি এখনও চালু করা যায়নি। তবে বর্তমান মহাপরিচালক নিয়োগ পাওয়ার পর এটি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়। শিগগিরই এটি চালু হবে বলে আশা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। এছাড়া অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার কথা বিবেচনা করে প্রতিটি বিভাগীয় কার্যালয়ে এমআই (মেডিকেল ইনভেস্টিগেশন) রুম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মচারী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে ঢাকার মিরপুর ও খুলনায় এটি চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগেও এটি চালু হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, ফায়ার সার্ভিসে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোস্টিং দেয়ার ক্ষেত্রে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যদি কোনো কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী অধিদফতরে কাজ করেন সেক্ষেত্রে তাদের কাছাকাছি স্থানে পোস্টিং দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া চাকরির শেষ তিন মাস পেনশন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সুবিধার্থে এবং অবসর প্রস্তুতির ছুটিকালীন প্রয়োজন সম্পাদনে যেন সমস্যা এড়ানো যায়, এ জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের তিন মাস আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজ জেলা বা জেলার আশপাশে পোস্টিং দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বাসস্থানের সমস্যা নিরসনে ঢাকার মিরপুর এবং পূর্বাচলে ২টি ১২ তলা ভবন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাসস্থান সমস্যা সমাধানে আরও ৬টি ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ১০ তলা ভবনগুলোর তিনটি সিদ্দিকবাজার অফিসার্স কোয়ার্টার, মিরপুর ও পোস্তগোলায় হবে। আর তিনটি হবে তেজগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার, সদরঘাট ও পোস্তগোলায়। এ কাজের জন্য বর্তমানে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে।

সূত্র আরও জানায়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নত বিশ্বের মতো পেশাগত বিষয়ে আধুনিক সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ১০০.৯২ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে মিরপুরে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স টেনিং কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক এ কর্নার শুভ উদ্বোধন করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের ‘আজীবন রেশন’ সুবিধা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অধিদফতরের মহাপরিচালক গত ৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বর্তমানে ঝুঁকি ভাতা বিদ্যমান থাকলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ বাদ যাওয়ায় এ বিষয়ে সংশোধিত প্রজ্ঞাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে গত ২৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরেকটি চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম জায়গা হবে এক একর। এ বিষয়ে থ্রিডি নকশা সংবলিত একটি প্রস্তাব অধিদফতর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। সেই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের শ্রেণি উন্নীতকরণেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সঙ্গে বর্ধিত ঝুঁকি নিরসনে ফায়ার স্টেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২২টি সদর ফায়ার স্টেশনকে ‘বি’ শ্রেণি থেকে ‘এ’ শ্রেণিতে উন্নীতকরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মডার্ন ফায়ার স্টেশনের জনবল ৫৬ জন, স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনের জনবল যথাক্রমে ৪১ ও এ এবং বি শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোর জনবল যথাক্রমে ৩৯ ও ৩১ জনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার স্টেশনের ভবনগুলো ফাউন্ডেশনসহ ৫ তলা করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। এছাড়া প্রস্তাবিত সব উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ফায়ার স্টেশনগুলোর স্থাপত্য নকশা স্টেশন স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন করে জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসকে পাঠাতে স্থাপত্য অধিদপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমি অধিদফতরে যোগদানের পর দেখেছি, ফায়ার সার্ভিসে অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। এ ভাবনা থেকেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়টি মিরপুরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া মিরপুরে বর্তমানে যে ট্রেনিং সেন্টারটি রয়েছে সেখানে খুব ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যাচ্ছে না। এজন্য ট্রেনিং সেন্টারটি পূর্বাচলের মাল্টিপারপাস ট্রেনিং কমপ্লেক্সে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ফায়ার মহাপরিচালক আরও বলেন, অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসাসেবার জন্য মিরপুরে উন্নতমানের একটি জেনারেল হাসপাতালও তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই এর সেবা কার্যক্রম শুরু হবে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ