নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার ট্রান্সমিশন ফার্ম, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর ’২২-ডিসেম্বর ২২) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি রেকর্ড লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। পিজিসিবি বলছে, মোট ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানির আয় কমেছে। ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষয়।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৫ টাকা ৫১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ৯৩ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ৫৩৪.৪৮ কোটি টাকায়, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫১৮.৬৯ কোটি টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৩৯২.৭১ কোটি টাকার, যা এক বছর আগেও নিট প্রফিটে ছিল ৬৬.৩৩ কোটি টাকা।
কোম্পানির সচিব মো. জাহাঙ্গীর আজাদ এর আগে বলেছিলেন, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পিজিসিবি একাধিকবার বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, এই ঋণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের এই ওঠানামার জন্যই ব্যাপক লোকসান হয়েছে।’
যদিও পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া এক বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১২৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে দাবি করে বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পিজিসিবি ১২২ দশমিক ৯২ কোটি টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে। আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) টাকা ৩২০ দশমিক ৮১ কোটি কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল। এবার কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে। ফলে কোম্পানির আয় তুলনামূলক কম হয়েছে।
ডলারের অস্থিতিশীলতায় বড় ধাক্কা পাওয়ার গ্রিডে: পিজিসিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হারের কারণে কোম্পানির লোকসান ৯৬৭ শতাংশ বেড়ে ৫৩৫.৭৯ কোটি টাকা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীল বিনিময় হার বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিজিসিবির (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ) জন্য। কোম্পানিটি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন মুনাফা দেখেছে এবার। উচ্চ ডলার রেটের কারণে দেশের উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে বিদেশি ঋণের পরিসেবা ব্যয় আকাশচুম্বী হওয়ায় কোম্পানিটি এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে।
পিজিসিবির সেক্রেটারি মো. জাহাঙ্গীর আজাদ বলেন, ‘উন্নয়ন কাজে কোম্পানি বিভিন্ন সময় উন্নয়ন সহযোগীর ঋণ নিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার অনুসারে, আগের বছর এই ঋণের পরিমাণ যা ছিল, এবার তা অনেক বেশি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ওঠানামাজনিত কারণে বড় লোকসান হয়েছে।’
পিজিসিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হারের কারণে কোম্পানির লোকসান ৯৬৭ শতাংশ বেড়ে ৫৩৫.৭৯ কোটি টাকা হয়েছে। এর ফলে পরিচালন মুনাফায় ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোম্পানির নিট মুনাফা ৬১.৬৮ শতাংশ কমে ১২২.৬১ কোটি টাকা হয়েছে- যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর থেকে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একটি সহযোগী সংস্থা পিজিসিবি এর আগে লাভের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে মুনাফা কমার মাধ্যমে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে কোম্পানিটির মুনাফায় যে ঊর্ধ্বমুখী ধারা ছিল, সেখানে ছেদ পড়ল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪.৮২ টাকা। এরপর গত বছরের মে মাসে তা বাড়তে শুরু করে এবং একই মাসে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
জানা গেছে, সরকার দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে পিজিসিবিকে অর্থায়ন করে আসছে। সরকার কোম্পানিকে যে অর্থ প্রদান করে তা ৬০ শতাংশ ইক্যুইটি এবং ৪০ শতাংশ ঋণ হিসেবে প্রদান করে। কোম্পানিটির ৭৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। কোম্পানির ফাইন্যান্সের জেনারেল ম্যানেজার মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন মেয়াদে কোম্পানির ঋণ রয়েছে, সরকারের ঋণসহ দাতাসংস্থা মিলে এখন প্রায় ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা টাকা ঋণ রয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আগের বছর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ভালো মুনাফা করায় ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে কোম্পানিটি। তবে এবারে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শেয়ারহোল্ডাররা। কারণ আগের বছরের তুলনায় এবার ১০ শতাংশ কম লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে পিজিসিবি।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্ব পালন করছে পিজিসিবি। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০০০ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে মিল রেখে নতুন নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্র তথা সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ করছে কোম্পানিটি। কোম্পানির আয়ের উৎস ট্রান্সমিশন চার্জ। বিগত বছরের ধারবাহিকতায় নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে আয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানির আয় ৬.৮৮ ভাগ বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৩৬.২৬ কোটি টাকা। কোম্পানির আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, রাজস্ব বাড়লেও আর্থিক ব্যয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার ওঠানামার কারণে এর মুনাফা ব্যাপকভাবে কমেছে। কোম্পানির আর্থিক ব্যয় ১২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮১.৫৮ কোটি টাকা হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা। জানা গেছে, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিটিকে ১৯৯৬ সালে একটি সম্পূর্ণ বিপিডিবি মালিকানাধীন সহায়ক কোম্পানি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ২০০৬ সালে ১৫.৩৬ শতাংশ শেয়ার অফলোড করে স্থানীয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় পিজিসিবি।
প্রথম প্রান্তিকেও মুনাফা কমেছে ২০ ভাগ: রাজস্ব ৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, এই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির মুনাফা ২০ শতাংশ কমেছে। আর রাজস্ব বেড়েছে ৬৯১ কোটি টাকা, যেখানে মুনাফা কমেছে ১০৪ কোটি টাকা যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১৩০ কোটি টাকা। আবার বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি বেড়েছে ১৫৩.১৬ কোটি টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৮.১৬ কোটি টাকা।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ