নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
নারী নির্যাতন মামলার আসামিকে না ছাড়ার কারণে থানায় ঢুকে নারী ও শিশু হেল্প ডেক্সের সামনে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করেছে কোটালিপাড়া পৌর মেয়রের আপন ভাগ্নে। মারধর করার সময় সেখানে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। থানার ভেতর পুলিশের সামনে পুলিশ কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারপিটের ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। মারধর করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ওই পৌর মেয়রের ভাগ্নে ও তার সহযোগিকে গ্রেফতার করে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থানায়।
এ ঘটনায় আহত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ জিয়াউল হক বাদী হয়ে কোটালিপাড়া পৌর মেয়র শেখ কামাল হোসেনের ভাগ্নে শফিকুল ইসলাম সুজন (২৫) ও পৌর মেয়রের নিকটাত্মীয় রাসেল শেখকে (২৫) আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় গ্রেফতার হয়ে তারা এখন জেলখানায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে কোটালিপাড়া থানার ওসি জিল্লুর রহমান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামি তানজিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়া হয়। নারী ও শিশু হেল্প ডেক্সের সামনে বসিয়ে রেখে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এসময় তারা হেল্প ডেক্সের সামনে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আসামিকে ছেড়ে দিতে তদবির করেন। কিন্তু এসআই জিয়াউল হক তাদের তদবির নাকচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা মারধর করে। তাদের মারধরে পুলিশ কর্মকর্তা সামান্য আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিক হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর থানার সিসি ক্যামেরা দেখে দেখা যায় তারা শুরু থেকেই পুলিশ কর্মকর্তার উপর চড়াও ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা ইন্সপেক্টর তদন্তের রুমের সামনে ওই এসআইকে মারধর করেন।
এ প্রশ্নের জবাবে ওসি আরও বলেন, হামলাকারী সুজন কোটালিপাড়া পৌর মেয়রে কামালউদ্দিন শেখের আপন ভাগ্নে। আমরা মেয়র মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। মেয়র পুলিশকে জানিয়েছেন, হামলাকারী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি তানজিলুরকে নারী ও শিশু হেল্প ডেক্সে বসেছিলেন। এসময় হেল্প ডেক্সের পাশের জানালা দিয়ে আসামির সঙ্গে সুজন ও রাসেল দীর্ঘ সময় কথা বলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে তারা থানার ভিতর প্রবেশ করে হেল্প ডেক্সের সামনে আসেন। এক পর্যায়ে তারা এসআই জিয়াউল হককে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এসআই জিয়াউলের শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন। পরে তাকে উদ্ধার করে কোটালিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ।
জানা গেছে, এ ঘটনার পর বিষয়টি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসের পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। পরে আসামিপক্ষের উপস্থিতিতে থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়। সেখানে দেখা যায় প্রথম পর্যায়ে সুজন জানাল দিয়ে কথা বলছিলেন এক আসামির সঙ্গে। দীর্ঘসময় ধরে আলাপের কারণে তাকে চলে যেতে বলা হয়। এরপর সে পৌর মেয়রের ভাগ্নে পরিচয়ে থানায় প্রবেশ করেন এবং আসামি তানজিলকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় এসআই জিয়াউর রহমান ছাড়তে অপরাগতা জানালে থানার ইন্সপেক্টর তদন্তের রুমের সামনে তিন দফা বেড়ধর মারপিট করা হয় এসআই জিয়াকে। বিষয়টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখার পর সুজনের পরিবারের সদস্যরা থানা থেকে বেরিয়ে যান এবং যথাযত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন। সোমবার এসআই জিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। এবং ওই মামলায় সুজন ও রাসেলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, অপরাধির কোনো দল নেই সে সেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে।
জানতে চাইলে সুজনের পরিবারের সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়েক বছর আগে একটি দুর্ঘটনার পর থেকে সুজন অনেকটাই মানুষিক ভারসাম্যহীন। মাঝেমধ্যেই সে উল্টাপাল্টা কাজ করে বসে। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনার সময় তিনি এমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ