ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ৫ রমজান ১৪৪৪

ঘুষের টাকা ভাগাভাগি!

প্রকাশনার সময়: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৫

অবৈধ উপায়ে ডিপিডিসির আওতাধীন বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করে সংযোগ প্রদানে একটি সংঘবদ্ধ দল কাজ করছে। সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে বিশাল অঙ্কের টাকা। আর ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে ডিপিডিসির। কারণ এসব কাজে জড়িত সংস্থাটিরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। যেন ঘুষের টাকা ভাগাভাগির মহোৎসব! রাজস্ববঞ্চিত এ অবৈধ টাকার সুষম বণ্টনে ডিপিডিসির বিভিন্ন দপ্তরের জড়িতদের কাছে যথাসময়ে পৌঁছে যায়। ফলে অনেক সময় এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এর রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, একটি চক্র প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে ডিপিডিসির আওতাধীন এনওসিএস মাতুয়াইল দফতরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করে সংযোগ প্রদান করেছে। আর এসব সংযোগে রাজস্ববঞ্চিত করা হয়েছে সরকারকে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে এ ব্যাপারে গত প্রায় দুবছরে দফায় দফায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে তেমন কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে অন্যত্র বদলি করা হলেও মূল খলনায়ক রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বরং এসব ঘটনার আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে বলে অভিযোগে প্রকাশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির অনেকেই বলছেন, মাতুয়াইলের মাদানীনগর হাউজিংয়ের লাইন নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট। আর এ ব্যাপারে প্রথম দফা তদন্ত রিপোর্টেই বেরিয়ে এসেছে এর সঙ্গে কে কে জড়িত। এরপর কী কারণে, কার স্বার্থে প্রথম দফা তদন্ত রিপোর্টকে পাশ কাটিয়ে পুনরায় আরও দুই দফা তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কারা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দোষীদের আড়ালের চেষ্টা করছে এবং সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কি না সেটি এখন বের করা দরকার বলে দাবি তাদের।

‘সরকারের মাল দরিয়ায় ঢাল’ এ প্রবাদ প্রবচনটি যেন ডিপিডিসিতে একের পর এক বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের নামে একটি চক্র সরকারকে বিশাল অঙ্কের রাজস্ববঞ্চিত করা হচ্ছে এক ধরনের হরিলুট। বনশ্রী, বাসাবো, শীতলক্ষা ডিভিশনের পর এবার মাতুয়াইল ডিভিশনে লাইন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় অভিযোগ হলেও অনেক সময়ই ব্যবস্থা নিতে ২-৩ বছর বা তারও বেশি সময় লাগিয়ে দেয়। আবার কোনোটি ধামাচাপা দেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তদন্ত কমিটিও গঠন হয় কিন্তু অধিকাংশেরই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। যার ফলে সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার অভাবে ডিপিডিসিতে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি বারবার ঘটছে বলে দাবি অনেকের।

জানা যায়, প্রায় কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মাতুয়াইলের মাদানীনগর হাউজিংয়ের মধ্যে ডিপিডিসির ঘুণপোকাখ্যাত সংঘবদ্ধ চক্রটি ১৫-২০টি পোল স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ইসলামবাগ ফিডারে রোড নম্বর-৯ এ এনজিলিকের ট্রান্সফর্মার (ভুট্টো চত্বর) হতে ২ স্প্যান এক্সিস্টিং লাইনে এইচ.টি লাইন টানার ফিটিং স্থাপন করে জি.কে টাওয়ারের সামনে নতুন পোল স্থাপন এবং তুষারধারা ফিডারে গিরিধারা রোড— এ বিচারপতির বাড়ির সামনে নতুন ২ স্পেন এইচ.টি লাইন টেনে এইচ.টি আবাসিক গ্রাহককে সংযোগ প্রদান, আর তুষারধারা ফিডারে ডাক্তার গলিতে এনজিলিক ট্রান্সফর্মার হতে এক্সিস্টিং পোল-এ ৩/৪ স্প্যান এইচ.টি লাইন টানা হয়েছে। আর বিষয়টি প্রকাশ পেলে এ ব্যাপারে তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) আব্দুর রউফ খান স্বাক্ষরিত এক দপ্তরাদেশে প্রথমে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, এনওসিএস নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের মুহাম্মদ কামাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার স্মারক নম্বর : ৮৭.২০১.৪২৮.০০.০০.০০৩.২০২১.২১৭, তারিখ-২৭-০৪-২০২১। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন— তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী, এনওসিএস বনশ্রী মো. আহসানুজ্জামান ও সহকারী প্রকৌশলী, এনওসিএস জুরাইন মো. সাকরুল আলম।

দপ্তরা দেশে অভিযোগের সত্যতা যাচাই, জড়িতদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়সহ সুপারিশমালা দিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

ডিপিডিসির গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এবং তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এনওসিএস নারায়ণগঞ্জ সার্কেল) মুহাম্মদ কামাল হোসেন (বর্তমানে শীতলক্ষ্যা ডিভিশনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত) বলেন, ‘তদন্তের বিষয়টি গোপন বিষয় তাই এটি তদন্ত কমিটি এবং কর্তৃপক্ষ জানেন। এর বাইরে আমি কিছুই বলতে চাই না।’ অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে এ ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি তো সবই জানেন। আমার কাছে জানতে চাচ্ছেন কেন। আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না।’ আপনার তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পর কি এমন ঘটল যে পুনরায় দুই দফা তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, ‘এর উত্তর আমি জানি না, যারা করেছেন, তাদের কাছে জানতে চান।’ আপনার তদন্তে দোষিদের চিহ্নিত করতে পেরেছেন কিনা এমন প্রশ্নে মুহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারেও কিছু বলব না। কথোপকথনের এক পর্যায় তিনি বলেন, আমার তদন্তে কিছু সুপারিশ করে দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিপিডিসির মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ হাসনাত চৌধুরী বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী এভাবে আমি কোনো তথ্য বা বক্তব্য দিতে পারি না। অপর প্রান্তে আপনি কে বলছেন আমি তা নিশ্চিত নই।’ তৃতীয় দফা তদন্ত কমিটি আপনারা মানবসম্পদ বিভাগ থেকেই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং এ ঘটনায় ৩ বার কেন তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজন হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এসব বিষয় কিছুই বলতে পারছি না।’

অভিযোগ রয়েছে, মাতুয়াইলের মাদানীনগর হাউজিংয়ের মধ্যে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পোল স্থাপন করে লাইন নির্মাণ করেছেন মাতুয়াইল ডিভিশনের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মুহিবুল্লাহ পারভেজ (বর্তমানে ডিপিডিসি লালবাগ ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত), উপসহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন হাওলাদার (বহাল তবিয়তে মাতুয়াইল ডিভিশনে) এবং সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সানোয়ার হোসেনের (বর্তমানে ডিপিডিসি শের-ই বাংলা নগর ডিভিশনে কর্মরত) নেতৃত্বে একটি চক্র। চক্রটি ‘মাতুয়াইল এলাকায়’ চারটি স্পটে বৈদ্যুতিক খুঁটি রোপণ করে বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করে। ওই চারটি স্পটের গ্রাহকদের লাইন নির্মাণের ডিপোজিটের টাকা ব্যাংকে জমা দেয় নাই। এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই লাইনগুলো নির্মাণ করে। এতে করে রাষ্ট্রের প্রায় ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন করে নিজেরা লাভবান হয়েছে।

মাতুয়াইল ডিভিশনের তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন হাওলাদার এ ব্যাপারে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনো কিছু অবহিত নয়। আপনার কর্মকালে লাইন নির্মাণের অনিয়ম ঘটেছে এর দায় আপনি এড়াতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মাতুয়াইল ডিভিশনের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী অভিযুক্ত মুহিবুল্লাহ পারভেজ এ ব্যাপারে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই, আমি কিছুই জানি না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ অনিয়মের সম্পূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী ও ডিপিডিসি প্রকৌশল সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন হাওলাদার। এ বিষয়গুলো জানাজানি হলে তৎকালীন ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) আবদুর রউফ খান তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তদন্ত রিপোর্ট পরিচালক অপারেশনের কাছে দাখিল করলে তিনি অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করে এক ধরনের ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পরে বিষয়টি কিছু গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে এক ধরনের বাধ্য হয়েই ফের ২য় দফা তদন্ত কমিটি গঠন করে। দ্বিতীয় দফা তদন্তে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কামরুল আজমের নেতৃত্বে গঠন করা হয় কমিটি। এবারও অদৃশ্য কারণে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কামরুল আজম তদন্ত প্রতিবেদন না দিয়েই অবসরে চলে যান। এরপর বিষয়টি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (নর্থ) আবু হেনা মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে আবারও তৃতীয় দফা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। জানা যায়, চলতি সপ্তাহেই তৃতীয় দফা গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির কর্মকর্তা জানান, চলমান তদন্ত কমিটি তদন্ত করতে গিয়ে এমন অনিয়ম দেখে বিস্মিত হয়েছেন। এমনকি তদন্ত কমিটির একজন এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন, মাতুয়াইলের মাদানীনগর হাউজিংয়ের মধ্যে লাইন নির্মাণে যে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে তার এক পঞ্চমাংশ প্রতিবেদনে তুলে ধরলে এর সঙ্গে জড়িতদের কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে বলে সূত্রের দাবি।

তৃতীয় দফা গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (নর্থ) আবু হেনা মোস্তফা কামাল এ ব্যাপারে বলেন, ‘পূর্বের দেয়া তদন্ত রিপোর্ট এবং ঘটনার নিজস্ব যাচাই-বাছাই করেই রিপোর্ট দেয়া হবে। দোষীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু তদন্ত কমিটি এবং কর্তৃপক্ষ জানবেন। এছাড়া এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছি না।’ কবে নাগাদ তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হতে পারে এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, একটু দেরি হতে পারে।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, মূলত এ অনিয়মের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ্দাত হোসেন হাওলাদার। সদ্য অবসরে যাওয়া নির্বাহী পরিচালক অপারেশন আব্দুর রউফের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পাশাপাশি প্রকৌশলী শাহ্দাত হোসেন ডিপিডিসি প্রকৌশল সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থাকার সুবাদে তিনি সংস্থার ৩৬টি ডিভিশনে তার টিমের মাধ্যমে দেদার অনৈতিক কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে তাকে ডিপিডিসির মাফিয়া হিসেবে বলছেন অনেকে। তার অনৈতিক কাজের মধ্যে বিশেষ করে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ, ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ, অবৈধ উপায়ে প্রভাব খাটিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া, বদলি বাণিজ্য ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন মাতুয়াইল ডিভিশনের পূর্বে বনশ্রী ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন। তৎকালীন সময় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে তাকে মাতুয়াইল ডিভিশনে বদলি করা হয়। পরে মাতুয়াইল ডিভিশনে যোগদান করেই শাহ্দাত হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে আবারও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। মাতুয়াইল ডিভিশনে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে শের-ই বাংলা নগর ডিভিশনে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে পদায়ন করা হয়েছে। এদিকে মাতুয়াইলের মতো একই ধরনের অনিয়ম করে সরকারকে রাজস্ববঞ্চিত করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিক্রমপুর সোসাইটি আবাসিক প্রকল্পে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে। লাইনটি নির্মাণে সব ধরনের নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে একটি চক্র ব্যক্তিস্বার্থে ইচ্ছেমাফিক কাজ করেছে ডিপিডিসির শীতলক্ষ্যা ডিভিশন। লাইন নির্মাণে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদানের জন্য আর্থিক প্রাক্কলন প্রস্তুত এবং পরিকল্পনা দপ্তরের পরামর্শ গ্রহণের বিধান থাকলেও তার তোয়াক্কাই করেনি সংশ্লিষ্টরা। লাইন নির্মাণের পর চালু করার সময় করা হয়নি সাট-ডউন প্রদান। এমনকি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের ডিপিডিসির নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ডিপোজিটের ওয়ার্ক কে ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক দেখিয়ে করা হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ। সরকারের বিশাল অঙ্কের রাজস্ববঞ্চিত করে একটি চক্র আবাসিক প্রকল্প থেকে নামে-বেনামে প্লট ও নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও সূত্রের প্রকাশ। এ ব্যাপারে ডিপিডিসি থেকে তৎকালীন শীতলক্ষ্যা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ১৩টি দফা উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটিও। একইভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচবছর আগে রাজধানীর কদমতলীর অনুপম বরফকলের মালিক মো. মতিউর রহমানের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে ডিপিডিসির মাতুয়াইল ডিভিশনের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত) গোলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে। ডিপিডিসির তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএম ইলেকট্রনিক্সের মালিক মো. মাইনুদ্দিনের মধ্যস্থতায় এ অর্থ নেয়া হয়। টাকা নেয়ার পর তারা আর সংযোগ দেননি। এমনকি মাস শেষে বিলের কোনো রশিদও দেয়া হয়নি তাকে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের ঊর্ধ্বতনদের কাছে অভিযোগ দেয়ার পরও কোনো ফল পাননি ওই বরফকল মালিক। পরে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদের কাছে সমাধান জানতে চাইলে উল্টো অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের অভিযোগের ভয়ভীতি দেখানো হয়। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী গ্রাহক ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দোষী ব্যক্তিরা হলেন— ডিপিডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ (আইডি নম্বর-১১১২০), সংস্থাটির সিস্টেম কন্ট্রোল স্ক্যাডার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল ফাতাহার (আইডি নম্বর-১১৩৩৮) ও গাড়িচালক আরুক মুন্সী (আইডি নম্বর-১৫৭৬৮)।

গ্রাহকের ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে পৃথক আদেশে ডিপিডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদকে দুই বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে মো. আবুল ফাতাহারকে তিরস্কার ও সাময়িক বহিষ্কার থাকাকালীন অর্ধেক বেতন দেয়া হয়। আর গাড়িচালক আরুক মুন্সীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পৃথক আদেশের স্মারক নম্বর যথাক্রমে: ৮৭.৪০৫.৪২০.০৮.৯৯(৩২).০৫১.২০১৮.৫৪, ৮৭.৪০৫.৪২০.০৮.৯৯(৩২).০৫১.২০১৮.৫৫ এবং ৮৭.৪০৫.৪২০.০৮.৯৯(৩২).০৫১.২০১৮.৫১।

সমাজ সচেতনদের মতে ডিপিডিসির দুর্নীতিবাজদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় বারবার তারা অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ফলে অর্থ কেলেঙ্কারিতে কর্মকর্তাদের জড়ানোর প্রমাণ মিললে দায়সারা গোছের ব্যবস্থা না নিয়ে কেবল সর্বোচ্চ শাস্তিই এমন অপরাধ কমাতে পারে বলে তারা মনে করেন।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ