ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শাবান ১৪৪৪
আজ সুন্দরবন দিবস

বনে বেড়েছে বাঘ!

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০৮
ছবি : সংগৃহীত

সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। বনে বাঘের বিচরণ বৃদ্ধি পদচিহ্নের উপস্থিতিতে এমন ধারণা করছেন বন সংরক্ষকরা। বন সংরক্ষকরা বলেছেন, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সুন্দরবনে বাঘের উপস্থিতি বেড়েছে।

পাশাপাশি বেড়েছে হরিণ, বন্য শূকরসহ অন্যসব বন্যপ্রাণীর উপস্থিতিও। এ বছর জানুয়ারিতে সরকারিভাবে বাঘ শুমারি শুরু হয়। যার ফলাফল জানা যাবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে।

এদিকে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্য সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার দেশে পালিত হচ্ছে সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ হিসেবে এবার পালিত হচ্ছে ২২তম সুন্দরবন দিবস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বৃক্ষ বিস্ময়’ বলা হয় সুন্দরবনকে। প্রচলিত ধারণা মতে, সুন্দরী গাছের নামানুসারে এ বনের নামকরণ। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাহারি গাছপালা, বন্য পশু-পাখি ও জীবজন্তু ঘেরা এ সুন্দরবন নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনাই পরিবর্তন এনে দেবে। সরকারিভাবে গত জানুয়ারিতে যে বাঘ শুমারি শুরু হয়েছে তার ফলাফলের উপর বাঘ বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যাবে।

তবে বনে বাঘের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সঙ্গে পর্যটকদের ভাষ্য ও মৌয়ালদের তথ্য মতে ধারণা করা হয় সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ ২০১৮ সালে বাঘ জরিপের তথ্যের পর দীর্ঘ চার বছর বাঘ শুমারি না হলেও বাঘের সঠিক তথ্য সবার অজানাই রয়েছে।

জানতে চাইলে খুলনা পশ্চিম বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান নয়া শতাব্দীকে বলেন, সুন্দরবন সংরক্ষণের জন্য আমাদের মাঠ কর্তৃক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি অভয়ারণ্যের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। যেখানে অভয়ারণ্যের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এর ফলে বাঘ এবং অন্যান্য জীববৈচিত্র্য যেমন শিকারি প্রাণী বাঘ হরিণ এগুলোর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রমাণ পর্যটকরা সুন্দরবনে গেলেই এখন মাঝেমাঝেই বাঘ দেখতে পাচ্ছেন। এবং বিভিন্ন মিডিয়াতে এ খবরগুলো আসছে। আসলে সুন্দরবন বন্যপ্রাণীদের বসবাসের জায়গা। তারা বনে ঘোরাফেরা করবেই। তবুও আমরা শঙ্কা প্রকাশ করি যে আমাদের কোনো কর্মী দুর্ঘটনার শিকার যেন না হয়।

তিনি আরও বলেন, আপনারা অবগত আছেন, চলতি বছরের গত জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে বাঘ শুমারির কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলাফল পাওয়া যাবে ২৯ জুলাই ২০২৪ সালে। তখন আমরা জানতে পারব যে বর্তমান সুন্দরবনে বাঘের অবস্থান কি এবং বাঘের পরিমাণ কেমন বেড়েছে। গতবার যেমন ২০১৮ সালে জরিপ হয়েছিল যে বাঘের পরিমাণ ১১৪টি। এটা বর্তমানে বাড়ল নাকি কমল বা কি করা উচিত এগুলো আসলে বাঘ শুমারি শেষে আমরা বলতে পারব। তাছাড়া বর্তমানে বনে গেলেই বাঘের পাশাপাশি বন্য শূকর ও হরিণের উপস্থিতি বেড়েছে। পর্যটকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেও বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি।

মৌয়ালরা জানান, বিগত সময়গুলোর তুলনায় সুন্দরবনে বড় বাঘের পায়ের ছাপের পাশাপাশি ছোট বাঘের পায়ের ছাপ দৃশ্যমান। এটা মধু সংগ্রহের সময় একাধিক জায়গায় দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বনে মধুও বেড়েছে। বেড়েছে বন্য শূকর ও হরিণসহ একাধিক বন্যপ্রাণী সংখ্যা। যেটা মধু সংগ্রহে বনে গেলেই চোখের সামনে দূরবর্তী অবস্থানে দৃশ্যমান।

তথ্য বলছে, সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পশুর, শিবসা, বলেশ্বর ও রায়মঙ্গল নদী। শত শত খাল জালের মতো ছড়িয়ে আছে সুন্দরবনের মধ্যে। বৃক্ষসম্পদের পাশাপাশি সুন্দরবন মৎস্যসম্পদেরও এক বিরাট আধার। এখানে ইলিশ, লইট্যা, ছুরি, পোয়া, রূপচাঁদা, ভেটকি, পারসে, চিংড়ি, চিত্রা ইত্যাদি মাছ ও কাঁকড়া পাওয়া যায়। সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্য নিয়ে গঠিত এক লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর বনাঞ্চলকে ইউনেসকো ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো একটি ভূখণ্ডে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকার জন্য প্রয়োজন ২৫ শতাংশ বনভূমির। আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ তার চেয়ে বেশ কম। বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর, যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫.৫৮ শতাংশ। বাংলাদেশের বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের ২২.৩৭ শতাংশ। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মানুষের চাহিদা।

বর্ধিত জনসংখ্যার বর্ধিত চাহিদা মেটাতে গিয়ে দেশের বনভূমি উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষের আবাসস্থল বাড়াতে, নতুন কৃষিজমি তৈরি করতে এবং ইমারত নির্মাণের রসদ জোগাতে গিয়ে করাতকলের নিচে ধ্বংস হচ্ছে বনভূমি নামের প্রকৃতির সবুজ-শ্যামল অংশ।

জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমডি এনামুল কবির নয়া শতাব্দীকে বলেন, সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের করণীয় হচ্ছে নিরাপত্তা জোরদার করা। যারা ক্ষতিকারক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বনের ভিতরে অনুপ্রবেশ, ফিল্ডারিং এগুলোর প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখা। আমরা যতটুকু জেনেছি বিশালাকার এ বন সংরক্ষণে যত লোকবল দরকার সেটুকু লোকবল বন বিভাগের নেই। যেটা দিয়ে বিশালাকার বনের নিরাপত্তা দিতে পারবে।

সুন্দরবনে বাঘের উপস্থিতি বৃদ্ধির ফলে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে বাঘ গণনা শুরু হয়েছে। বাঘের উপস্থিতিতে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে এটা সন্দেহপ্রবণ! কারণ হলো, যে পদ্ধতিতে আমরা এখনো বাঘ গণনা করি, সেটাতে খুব শক্তভাবে বলা মুশফিল যে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে কি কমছে।

আর পর্যটনকে সুন্দরবনমুখী করার জন্য সুন্দরবন ইকোসিস্টেম এমন একটি ইকোসিস্টেম যেখানে ট্যুরিজম ইনকারেজ না করলে ভালো হতো। কিন্তু যেহেতু দেশে উন্নয়ন দরকার মানুষের রিক্রিয়েশনেরও ব্যবস্থা করা দরকার; সেজন্য ট্যুরিজমকে সুন্দরবনের ইনকারেজ করা হয়। তাই ট্যুরিস্টদের ভালো সুবিধা দেয়ার জন্য সুন্দরবনে ভিতরে কোনো স্থাপনা করার সুপারিশ আমরা করি না। সবই অন বোর্ড আরও আধুনিক আরও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুন্দরবনে ট্যুরিস্টরা যেতে পারে, নদীতে ঘুরতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে যদি শিক্ষিত সমাজ এই ট্যুরিজম ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত থাকে বা তারা যদি আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা রাখে, এরকম লোকদের ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে নিয়োগ দেয় তাহলে পর্যটকদের জন্য উপকারী হবে। যারা সুন্দরবন কি সেটা সম্পর্কে বোঝাতে পারবে এমন। এবং সুন্দরবনের উপকারিতা, বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এগুলো সম্পর্কে যারা সম্মুখজ্ঞান রাখে, এ ধরনের ব্যবস্থাপনার কথা আমরা সবসময় তাদের বলে থাকি।

কারণ, সুন্দরবনের ভিতরে আমি চাইলেই হোটেল করতে পারি না। অথবা করা উঠিত না। আবার সুন্দরবনের ভিতরে কোনো পর্যটকদের নামতে দেয়াও উচিত না। বনে পর্যটকদের নামতে দিলে বন্যপ্রাণী হুমকির সম্মুখীন হয়।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ