নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
ছোটপর্দার পরিচিত মুখ, পাশাপাশি শিক্ষকতাও করছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন। তিনি মনোজ কুমার প্রামাণিক। তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনেছেন দৈনিক নয়া শতাব্দীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন।
আপনার বাবা কলেজের শিক্ষক, ঠাকুর দাদা স্কুল শিক্ষক ছিলেন, আপনিও শিক্ষক। সব মিলিয়ে কেমন লাগে?
মনোজ : মনে হয় যে পূর্বপুরুষদের বাইরে যেতেই পারিনি আমি। শুরুর দিকে ভেবেছিলাম, হয়তো ভিন্ন কিছু করছি। কিন্তু যত বয়স বেড়েছে ততই দেখতে পাচ্ছি যে তাদের মতোই। এটা ভালোই লাগে, একটা সুন্দর অনুভূতি। সম্ভবত তারাও নিজেদেরকে আমার মধ্যে খুঁজে পান। ফলে তাদেরও ভালো লাগে।
ছোটবেলা থেকে বাবাকে অভিনয় ও শিক্ষকতা দুটিই করতে দেখেছেন। কখনও কি ভেবেছেন আপনিও দুটিই করবেন?
মনোজ: প্রথমত বাসা থেকে চাপ ছিল যে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। (হাসি দিয়ে) ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার যে হতে পারবো না, এটা আগে থেকেই জানতাম। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে নাট্যকলা নামের একটি সাবজেক্ট দেখলাম। তখন মনে হলো- আমি এটাতে পড়লে আমার মত করে কিছু করতে পারবো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে এই ধারণাও ধারণ করেছিলাম যে ভালো ফলাফল করতে পারলে শিক্ষক হতে পারবো। তখন থেকেই পড়াশোনা, ফলাফল- এ বিষয়গুলোকে সিরিয়াসলি নেই। এরপর পড়তে গিয়েই অভিনয়টা শেখা হয়। এর আগে অভিনয়ের আশপাশেও যাইনি। একটা ভীতি ছিল, লজ্জাবোধ করতাম। তো তখন থেকেই অভিনয় শুরু হয়। তখনও এক নম্বর লক্ষ্য শিক্ষকতাই ছিল, দুই নম্বরে ছিল অভিনেতা হওয়া। অভিনয় করতে এসে অভিনয়টা ভালো লেগে যায়। এদিকে শিক্ষকতাটাও উপভোগ করছি। এখনতো দুটোই করছি।
২০১৪ সালে ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’র বিজ্ঞাপন ও এই সিরিজের একটি নাটকে অভিনয় করেছেন। গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচিতি বাড়লো?
মনোজ: আকর্ষণবোধ তো অনেক আগে থেকেই ছিল। কখনো চাইনি যে আমি নায়ক কিংবা প্রোটাগনিস্ট চরিত্রে অভিনয় করবো। থিয়েটারে পড়াশোনা করায় অভিনয় করা হয়েছে। সবাই যখন প্রশংসা করছিলো তখন ভাবলাম হয়তো অভিনয়টা করতে পারবো। ভালোও লাগতো, উপভোগ করছিলাম। এরপর অবশ্যই ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প আমার অভিনয় জীবনে একটা টার্ণিং পয়েন্ট। আদনান আল রাজীবকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আমাকে ডেকে এনে এই বিজ্ঞাপনের মডেল বানিয়েছেন। এরপর এই সিরিজের নাটক করলাম। হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে এই নাটকগুলো আমাকে দর্শকদের কাছাকাছি নিয়েছে, গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। এবং এর মাধ্যমে আমি অভিনয়ের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে উঠি।
দর্শকরা আপনাকে রোমান্টিক ক্যারেক্টারে দেখেই অভ্যস্ত। তবে ওটিটিতে বা বড় পর্দায় আপনাকে ভিন্নরূপে দেখা যাচ্ছে।
মনোজ: আমার আকর্ষণবোধ সবসময়ই মাল্টিডাইমেনশনাল ক্যারেক্টার প্লে করা। তবে হয়েছে কি, দর্শক আমাকে চিনেছে ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের মাধ্যমে। এতে আমি রোমান্টিক বয় হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। তাই তখন দর্শক চেয়েছে, ডিরেক্টর চেয়েছে, চ্যানেল চেয়েছে - তাই সেরকম ক্যারেক্টারেই নাটক করেছি। এখন ওটিটি আসায় এবং সিনেমাতে সুযোগ পাওয়ায় ভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি।
বাংলাদেশের নাটককে আবার আগের জায়গায় নিতে আসলে কি প্রয়োজন?
মনোজ: নাটক আগের জায়গায় আবার যাবে কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ এখন ওটিটি এসেছে। আবার সিনেমাতেও একটা নতুন জোয়ার এসেছে। তবে টেলিভিশনগুলো যেটি করতে পারে তা হল- ৪৫ মিনিটের একটা এপিসোড না করে সিরিয়ালের দিকে বেশি জোর দেয়া। এতে দর্শকদের আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি বাজেট বাড়াতে হবে। বাজেট তো বাড়ে স্পন্সর পেলে। দর্শকপ্রিয়তা না থাকলে স্পন্সর করে না কেউ। টিভির দর্শক আসলে কমে গিয়েছে। যার কারণে আগের মতো করাটা সম্ভব হয়ে উঠবে কি না তা নিয়ে আমি সন্দিহান। তবে এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া গেলে আগের মতো হতে পারে।
‘মনপাচিত্র’ নামে আপনার একটি প্রোডাকশন হাউসও আছে। এটি নিয়ে পরিকল্পনা কি?
মনোজ: আমার বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্যোগে কিছু কাজ করতে চায়। কাজ করতে গেলে তো বাজেট লাগে। যখন বাজেটের বিষয়টা আসলো তখন শিক্ষার্থীরা বললো, স্যার আপনিই প্রডিউস করেন। তখন বললাম যে আইডিয়াটা ভালোই। যখন কাজ শেষ হলো তখন সেগুলো বিক্রি করারও আইডিয়া আসলো। তখন সে ধরনের মানসম্পন্ন কিছু কাজ প্রডিউস করলাম আমরা। সেগুলো পরবর্তীতে বায়োস্কোপ, চরকির মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে গেল। এবারে আমরা অনুভব করলাম যে আমাদের একটা নিবন্ধিত প্রযোজনা সংস্থা থাকা দরকার। এভাবেই গড়ে ওঠে ‘মনপাচিত্র’। এটাকে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে - আমরা কিছু শর্টফিল্ম তৈরি করছি। আরো অন্যান্য কাজ করছি। এর সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীরা পাশ করে বেরোলে তখন হয়তবা আমরা এটাকে নিয়ে বিস্তৃতভাবে ভাববো।
‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ প্রেক্ষাগৃহে চলছে। এর আগে গেল ‘অপারেশন সুন্দরবন’। বড় পর্দায় কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মনোজ: ছোট পর্দার চেয়ে বড় পর্দায় অনেই বেশি সাড়া পাচ্ছি। ভিন্নধর্মী চরিত্রে আমাকে দেখতে পেয়ে দর্শকরাও ভালো ফিডব্যাক দিচ্ছে। অপারেশন সুন্দরবনে অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে আমার চরিত্রের জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছি। সিনেমাটাও বাংলাদেশের একটা হিট সিনেমা ছিল। এ দিকে বীরকন্যা প্রীতিলতা কেবল মুক্তি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত দর্শক দেখছে। যতটুকু সাড়া পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে- ভালো করেছি।
অভিনয় ও শিক্ষকতা সামলাচ্ছেন কিভাবে?
মনোজ: সমস্যাটা মূলত হয় সময় নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যতক্ষণ আছি ততক্ষণ শিক্ষকতা নিয়ে ব্যস্ত আছি আবার শেষ করেই দৌড় দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। এভাবে যে কদিন আমার ছুটি আছে, শ্যুটিং করে আবার ক্যাম্পাসে ছুটে আসতে হয়। খুবই ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। কিন্তু দুটোকেই অত্যন্ত উপভোগ করি বলে দুটোই ঠিকঠাক করতে পারি।
শিক্ষক হিসেবে এবং অভিনেতা হিসেবে সফলতার জায়গাটা কোথায় দেখেন?
মনোজ: সফলতা শব্দটি খুবই জটিল একটি শব্দ। সফলতা হলো লেগে থাকার একটা বিষয়। নিজেকে সফলও মনে করি না, বিফলও মনে করি না। মনে করি যে শিক্ষকতা ও অভিনয়- এ দুটি কাজ আমার ভালো লাগে। আমি এ দুটোকে ভালোবাসি। এ বিষয়েই পড়াচ্ছি এবং এ বিষয়েই কাজ করছি। ভালোবাসা নিয়েই কাজ দুটো করে যেতে চাই। যদি সফলতার কথা বলেন, তাহলে আমি বলবো- আমার সফলতা এটাই যে আমি এই দুটো সেক্টরে কাজ করে যেতে পারছি।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ