নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা চেয়ে নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বলছেন, ওই শিক্ষকের সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম আহম্মেদ মুন্সী। তিনি উর্দু বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। অপরদিকে অভিযোগকারী শিক্ষক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রশিদুল আলম।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৪ জানুয়ারি তিনি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস নিচ্ছিলেন। ক্লাস চলাকালীন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আহম্মেদ মুন্সী তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে দরজায় লাথি মেরে বের হয়ে যান। পরে বিভাগের সভাপতি আতাউর রহমানের সঙ্গে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনের চারতলা থেকে নামার সময় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করে।
এ সময় অভিযুক্ত আহম্মেদ মুন্সী ওই শিক্ষককে ‘দলবাজি করেন, না? আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাক, দেখা হবে। জীবন নিয়ে পালানোর সময় পাবেন না’ বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পালিয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ জন নিয়মিত ও তিনজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই প্রথম সেমিস্টারে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তাদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা গত ১২ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হয় ২১ এপ্রিল। গত ২৫ আগস্ট ফল প্রকাশিত হয়। এতে ৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনের ফল প্রকাশিত হয়। ৬ জন নিয়মিত ও দুজন অনিয়মিত শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশিত হয়নি এবং ছয়জন শিক্ষার্থী একটি করে কোর্সে ফেল করেছেন। আহমেদ মুন্সী ফেল করা শিক্ষার্থীদের একজন।
অভিযোগের বিষয়ে আহম্মেদ মুন্সী বলেন, আমাদের ২০১৯-২০ সেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের রেজাল্ট নিয়ে তদন্ত চলমান আছে। রেজাল্ট অনুযায়ী আমি ফেল করেছি। সে হিসেবে এখন পরীক্ষা দিলে ২০২০-২১ সেশনের সঙ্গে দিতে হবে। ওদের নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ওই ঘটনার এখনো কোনো সমাধান হয়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও যদি আমাদেরকে ফেল দেখানো হয়, তাহলে পরীক্ষা দিতে হলে আমাকে ক্লাস করতে হবে। তাই আমি ওইদিন ক্লাসে যাই। কিন্তু আমি ক্লাসে গেলে স্যার বলেন, ‘১৯-২০ সেশনের কেউ থাকলে ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও। তোমাদের ক্লাস নিতে পারবো না। তদন্ত কমিটির অনুমতি নিয়ে আসো তোমরা। আমি কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না।’ পরে আমি অনুমতির জন্য দরখাস্ত করেছি। কিন্তু পরে শুনেছি তিনি আমার নামে জিডি করেছেন।’
তবে গালিগালাজ ও হুমকি প্রদানের বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে তিনি বলেছেন, ‘ওইদিন স্যারের সাথে আমার ক্লাসের আগে পরে দেখাই হয়নি।’
তদন্ত কমিটির অনুমতি নিয়ে আসার বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক রশিদুল আলম বলেন, ‘সে যখন ক্লাসে আসে তখন আমি বলেছি, তোমাদের ক্লাস করতে হলে তদন্ত কমিটির অনুমতি লাগবে। কারণ বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’
ক্লাস করতে অনুমতি প্রয়োজন কিনা? এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাজ ফল পুনর্মূল্যায়ন করা। যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের পরবর্তী বর্ষের সাথে ক্লাস করতে কোনো বাধা নেই।’
এ বিষয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওইদিনের ঘটনার পর ক্লাস করার অনুমতি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কলা অনুষদের ডিন ও বিভাগের সভাপতি বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন আহম্মেদ মুন্সী। সেখানে তিনি অভিযোগকারী শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর তিনি ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে উর্দু বিভাগের সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, ‘ঘটনার দিন ক্লাস শেষে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেন সহকর্মী রশিদুল আলম। পরে ওই শিক্ষার্থী ক্লাস করার অনুমতি চেয়ে আমার কাছে আবেদন করেছে। শিক্ষার্থীর অসদাচরণ ও ক্লাস করার অনুমতির বিষয়টি তদন্ত করে খুব শীঘ্রই বিভাগ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘উর্দু বিভাগের এক শিক্ষক একই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছে। আমরা সেটিকে আদালতে পাঠিয়েছি। আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ