শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯

ইবি শিক্ষার্থীকে রাতভর র‍্যাগিং : নিন্দা, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশনার সময়: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৮ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৫২

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিং ও হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করারও অভিযোগ করেন তিনি। ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। এছাড়াও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি ইমানুল সোহান ও সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান সুইট এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান। এছাড়াও পৃথক এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইবি শাখা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আবাসিক হলের অভ্যন্তরে একজন ১ম বর্ষের নারী শিক্ষার্থীকে যেভাবে র‍্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘৃণ্য নির্যাতনের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার অভিযুক্ত মূল হোতা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ সহযোগীদের উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আমরা বিস্মিত যে, ক্যাম্পাস যেখানে হওয়ার কথা ছিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো পরিবেশ সেখানেই ছাত্রলীগ নেত্রীসহ কর্মীদের হাতে ঘটছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার এমন দৈন্যদশায় আমরা উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে নারী নিপীড়ন ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না হওয়ার ফল এই নারী নির্যাতনের ঘটনা। বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেমন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও চরম ব্যর্থ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য, নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। তাই নবীন ছাত্রীকে র‍্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত ও যারা এসব নেত্রী ও কর্মীদের মদদদাতা তাদেরকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রমাণ করুক যে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপোষহীন। আর নয়তো এটাই প্রমাণিত হবে যে নিপীড়নকারী ও নির্যাতনকারীরা প্রশাসনের চাদরের নিচেই আশ্রয় পায়। ক্ষমতায় বলয়ে নিরাপত্তা লাভ করে।

এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

রেজিস্ট্রার অফিস ও শেখ হাসিনা হল সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক ও একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে বলে রেজিস্ট্রার দফতর সূত্র জানিয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম।

এদিকে, হল কর্তৃপক্ষের করা চার সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিতে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসানুল হককে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌমিতা আক্তার। তারা উভয়েই দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক। এছাড়া হলের শাখা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকও কমিটিতে আছেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী হাসান ইনান বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে জোরালোভাবে ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং ও হয়রানি করা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনোই করে না। শিক্ষার্থীদের সুখ দুঃখে সাথী হতে চাই।

উল্লেখ্য, গত শনি ও রোববার দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় নবীন এক ছাত্রীকে ৩/৪ ঘণ্টা করে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা মারধরের পাশাপাশি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, হুমকি-ধামকি ও ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন ও হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। মঙ্গলবার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ