ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফুলপরিকে র‍্যাগিং ও হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করারও অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী।

রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংসখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া তার সহযোগী তাবাসসুম ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী হল প্রভোস্ট, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমার ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে অংশ নেয়ার জন্য আমি ৭ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ৩০৬ নং রুমে আমার এলাকার (পাবনা) পরিচিত এক আপুর রুমে গেষ্ট হিসেবে উঠি। যথাযথভাবে সবাইকে সম্মান পূর্বক রুমে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করি। এরপর ১১ ও ১২ তারিখে ২ দফায় আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক ছাত্রী, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা আপুর নেতৃত্বে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তাবাচ্ছুম আপুসহ নাম না জানা আরও অন্তত ৭-৮ জন দ্বারা র‍্যাগিংয়ের নামে চরমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হই। এসময় তারা আমাকে বিবস্ত্র করে আমার গোপন ভিডিও ধারণ করে রাখেন। এমনকি তারা আমাকে জীবননাশের হুমকিও প্রদান করেন।

লিখিত অভিযোগের সাথে সংযুক্ত নির্যাতনের বিবরণে ওই ছাত্রী বলেন, আমার বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুম নামের এক আপু আমাকে দেখা করতে ডাকে কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে তার রুমে যেতে পারিনি। এরপর থেকেই তারা আমার উপর চড়াও হতে থাকে এবং তাদের রুমে গেলে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে এবং হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। তারা অভিযোগ করতে থাকেন তাদের না জানিয়ে কেন হলে উঠেছি। অথচ আমি আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে নয় গেস্ট হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য উঠেছিলাম। এরপর রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় অন্তরা আপুসহ তার সাথে থাকা ৭-৮ জন আমাকে গণরুমে নিয়ে যেয়ে এলোপাতাড়িভাবে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। আপু আমাকে কেন মারছেন বলতে গেলে তারা আমার মুখ চেপে ধরে থাকেন এবং সজোরে চোয়ালে থাপ্পড় মারে। এছাড়া আমাকে বলতে থাকে, আমরা কি করতে পারি জানিস তুই? আমাদের সম্পর্কে তোর কোন আইডিয়া আছে?

ভুক্তভোগী আরও বলেন, আমি কান্না করে তাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা আমাকে লাথি মারেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, গামছা দিয়ে গলায় ফাস দিয়ে ধরে রাখেন, একটা ময়লা গ্লাস চেটে পরিস্কার করিয়ে নেন এবং আমাকে বিবস্ত্র করে সেটার ভিডিও ধারণ করেন। এছাড়া আমাকে বলতে থাকেন যাতে এই বিষয়টা কোনভাবেই বাইরে না যায়, যদি বলিস তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করে দিবো। ভিডিওগুলো তাদের সংরক্ষণে আছে। এসময় অন্তরা বলেন, যদি তুই প্রশাসনের কাছে কোন প্রকার অভিযোগ দিস তাহলে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো। এরপর আমাকে রাত সাড়ে ৩টায় ছেড়ে দেয়। এ কারণে পরেরদিন প্রাণের ভয়ে আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে গ্রামের বাড়ি পাবনাতে চলে যাই।

অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী বলেন, সে আমার নাম করে আমাকেই ভয় দেখাচ্ছিলো। এজন্য তাকে বুঝানো হয়েছে। তার সঙ্গে আমার এমন ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ঘটনা যদি সত্য হয় এবং তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের কাছে তার শাস্তির দাবি জানাবো। একইসাথে আমরা সাংগঠনিকভাবেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

এ বিষয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামছুল আলম বলেন, আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দিবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি যাচাইবাছাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই র‍্যাগিং অ্যালাও না। আমি নীতিগতভাবে এটা কখনো সমর্থন করি না। বিষয়টা কিভাবে কি ঘটলো আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নয়াশতাব্দী/এমএস