ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ৫ রমজান ১৪৪৪

রাবিতে হলকক্ষে আটকে ছাত্র নির্যাতন, হত্যার হুমকি

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। এছাড়া ওই শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থী।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জানাজানি হয়। ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযুক্তরা হলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান ও হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলামের ৭-৮ জন কর্মী হলের দ্বিতীয় ব্লকের ৩৮৩ নম্বর রুমে এসে কৃষ্ণ রায়কে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। বের হতে রাজি না হলে এসময় তার বেডপত্র তুলে ফেলে দিয়ে তারা আরেকটি বেড তুলে দেয়। এসময় কৃষ্ণ ভিডিও করতে চাইলে হাতে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তারা হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার চেক করেন। এছাড়াও তার সাথে থাকা এক বন্ধুর ফোনও চেক করেন।

কৃষ্ণ রায় বলেন, আমি রাতে পড়াশোনা করছিলাম। হঠাৎ করে তারা আমার রুমে এসে বেডপত্র ফেলে দেয়। আমাকে রুম থেকে বের হতে বললে আমি বের না হয়ে চেয়ারে বসে থাকি। সোলায়মান নামে এক ভাই আমাকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দেওয়া শুরু করে। আমি ভিডিও করতে চাইলে আমার ফোন কেড়ে নেয়। এরপর আমাকে জোর নাইম ভাইয়ের রুমে নিয়ে যায়।

কৃষ্ণ আরও বলেন, আমার বন্ধু মাহবুব আমার পেছন পেছন এসে রুমে ঢুকলে তার ফোনও ওরা কেড়ে নেয়। তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নাইম ভাইয়ের সামনে আমাকে কান ধরিয়ে উঠবস করায়। আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমি হিন্দু জানার পর বলে - তোকে এখন মেরে ফেললেও কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।

জানতে চাইলে মাহবুব মাহবুব বিল্লাহ বলেন, আমি ওকে ধস্তাধস্তি করতে দেখে ছুটে যাই। ওরা আমাকে রুমে ঢুকতে দিতে না চাইলে জোর করে ঢুকলে আমার কাছ থেকে একজন মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায়। পরে আমাকে বের করে দিলেও আমার মোবাইল দেয়নি। আধঘন্টা পর আমার মোবাইল ফিরিয়ে দেয়।

অভিযুক্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার কর্মীদের সাথে কথাকাটি হয়েছিল। পরে বিষয়টি সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়ে কথাকাটি হয়েছিল। পরে এবিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি এবং ঐ ছেলে ওই সিটেই রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, কৃষ্ণ নামে শিক্ষার্থী জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সিট না থাকায় দিতে পারিনি। এরমধ্যে সে হয়তো সিনিয়রের মাধ্যমে হল উঠেছে। তবে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী রাজনৈতিক পরিচয়ে তাকে নির্যাতন করেছে বলে শুনেছি। আমি ওই শিক্ষার্থীদের বহিস্কারের জন্য সুপারিশ করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। হল প্রভোস্টের কাছে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ