ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ৫ রমজান ১৪৪৪

বাকৃবিতে চরম হতাশা নিয়ে সমাবর্তনের মাঠ ত্যাগ গ্র্যাজুয়েটদের 

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:০৪ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:২৭

দীর্ঘ ৭ বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অষ্টম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি নিয়ে আগে থেকেই গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে বিরাজ করছিল চাপা ক্ষোভ। পরবর্তীতে যখন সাদামাটা একটি ব্যাগে কস্টিউম দেওয়া হয়, তখন তাদের মাঝে ক্ষোভের মাত্রা যেন আরও বেড়ে যায়।

তাই সমাবর্তনের দিন অতিথিদের বক্তব্য শোনার যেন কারো আগ্রহ ছিলো না। সবাই বন্ধুদের সাথে ছবি তোলা নিয়েই ব্যস্ত ছিলো। দেখে মনে হচ্ছিলো এটি কোনো সমাবর্তন নয়, যেন মিলনমেলা।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে বাকৃবির অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সময়মতো সনদপত্র বিতরণ না করা, সনদে ভুল, উপহার না দেওয়া, অনুষ্ঠানে পানির ব্যবস্থা না করা, খাবারের বুথে গ্র্যাজুয়েটদের হয়রানির শিকার হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে সমাবর্তন আয়োজকদের বিরুদ্ধে। চরম হতাশা আর অসন্তুষ্টি নিয়ে সমাবর্তন মাঠ ত্যাগ করেন অনেক গ্র্যাজুয়েট। এছাড়া অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বাকৃবি গ্র্যাজুয়েটরা।

জানা যায়, সমাবর্তনের বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। যেখানে গ্র্যাজুয়েটদের প্রত্যাশা ছিলো মহামান্য রাষ্ট্রপতির উপস্থিতি। এছাড়া সমাবর্তনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বা নোবেল বিজয়ী কেউ না থাকায় আশাহত হয়েছেন তারা। প্রত্যাশিত সম্মানিত অতিথি না থাকায় তাই শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পরই অনুষ্ঠান ত্যাগ করে তারা। গ্র্যাজুয়েটদের অভিযোগ সমাবর্তন সভাপতি এবং সমাবর্তন বক্তা দুজনই রাজনীতিবিদ। বক্তব্যের বেশিরভাগ কথাই ছিলো রাজনৈতিক। মূলত মূল সনদপত্র প্রদানের জন্যই সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেই মূল সনদপত্র প্রদানের বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে অভিযোগ গ্র্যাজুয়েটদের। সনদপত্র বিতরণের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ছিলো। তবে সময়মতো সনদপত্র বিতরণ করা হয়নি।

ভেটেরিনারি অনুষদের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের গ্র্যাজুয়েট মো. সাজেদুল হক বলেন, প্রজ্ঞাপনে দেওয়া সময় অনুযায়ী এসেও গাউন সংগ্রহ করতে পারেনি অনেকে। একেক বার একেক সময় দেওয়ায় গ্র্যাজুয়েটদের অনেক বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছিলো না কোনো পানির ব্যবস্থা। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন। এক হাজার মানুষের জন্য একটি খাবারের বুথ থাকায় হয়রানির শিকার হয়েছেন সবাই। এছাড়াও সনদ বিতরণে বিলম্ব হওয়ায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। সর্বোপরি সমাবর্তন আয়োজনের পদে পদে ছিলো অব্যবস্থাপনার চরম দৃষ্টান্ত।

অন্যান্য অনেক গ্র্যাজুয়েটদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, অনুষ্ঠানে সকলের বসার জন্য পর্যাপ্ত আসন ছিলো না। সমাবর্তন স্মরণিকাও পর্যাপ্ত সংখ্যক ছিলো না। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও ভাড়া করা গাউন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গাউন সংগ্রহের জন্য একাধিকবার বুথে যেতে হয়েছে। সমাবর্তন ব্যাগে আলাদা করে কোনো উপহারও দেওয়া হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, সার্টিফিকেটে ভুল হওয়াটা আমাদের ব্যর্থতা, আমরা এর দায় স্বীকার করছি। আসলে এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট এতো কম সময়ে তৈরি করাটা খুবই কঠিন। আমরা সবাই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি এই ভুল সংশোধনের জন্য। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা ভুল সার্টিফিকেটগুলো সংশোধন করে বিতরণ করে দিবো। আর খাবার নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি, পর্যাপ্ত খাবার বিতরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই একসাথে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছে তাই একটু বিলম্ব হয়েছে। এবারে বাজেট স্বল্পতার কারণে আমরা উপহার সামগ্রী বা অন্যান্য বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে আয়োজন করতে পারিনি বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ