নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
সমন্বিত কৃষির অংশ হিসেবে মৎস্য, সবজি ও বিভিন্ন ফলজ গাছের দিকে ঝুঁকছেন মৎস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিল অধুষ্যিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ এলাকার মৎস্য চাষিরা।
এমনকি পার্শবতী রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর উপজেলার মৎস্য চাষিরাও সমন্বিত কৃষির দিকে ঝুঁকছেন।
সরেজমিনে খোঁজ গিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও পুকুরের পাশের জায়গা অকেজো অবস্থায় ফাঁকা থাকতো। বর্তমানে পুকুর পাড়ের সেই ফাঁকা জায়গায় অনেকেই গড়ে তুলেছেন সবজি উদ্যান যেমনঃ কলা, বড়ই, পেয়ারা বাগান সহ মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, ঢেরস, মাশ কলাই সহ নানা শাক সবজির বাগান । এতে করে মাছ চাষের পাশাপাশি বাড়তি আয় যোগাচ্ছে এ সকল সবজি চাষাবাদ। আবার অনেকেই পুকুর ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি পালনের পোল্ট্রি ফার্মও গড়ে তুলেছেন।
এদিকে সোলাপাড়া, শ্রীকৃঞ্চপুর, ভাদাশ এলাকায় পুকুর পাড়ে দিন দিন কলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যুবকরা মাছ চাষের পাশাপাশি কলা চাষের দিকে নজর দিচ্ছেন বলে জানান তরুণ উদ্দ্যোক্তা জাবেদ আলী নামের এক মৎস্য চাষি।
তিনি আরো জানান, সরকারি, বে-সরকারি সংগঠনগুলো যদি স্বল্প সুদে ও সহজে ঋণ প্রদান কার্যক্রম বিস্তৃত করে তাহলে বেকারত্বের হার অনেকাংশে কমে যেত।
স্কুল শিক্ষক ফটিক সরকার বলেন, কলা চাষে সফলতার মুখ দেখছেন চাষিরা। ফলে অন্যের জমি বর্গা নিয়েও অনেকে কলা বাগান করছেন। আবার অনেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশের পতিত জমিতেও বাগান করছেন কলার।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসের সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ন ইসলাম জানান, প্রশিক্ষিত খামারীরা মৎস্য চাষের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে অন্যান্য ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া মাছ চাষে পুকুরের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি দিন দিন বাড়ছে এ সকল সবজির বাগান। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন মৎস্য চাষি কৃষকেরা।
মৎস্য চাষি সাকোয়াত, ফিরোজ আলী, আব্দুল হাকিম, শাহিনুর ইসলাম সহ একাধিক মৎস্য চাষি বলেন, আমরা পুকুর পাড়ে প্রায় ২ বছর ধরে কলা চাষ করছি এবং ভালো লাভও পাচ্ছি। কলা গাছ লাগানোর কয়েক মাস পর বাগানের কলা বিক্রির উপযোগী হয়। বয়স ও আকার ভেদে বিভিন্ন কাঁদি কাঁচা কলা পাইকারি বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। আবার বাজারে কলা গাছের ভেতরের অংশ ভাঁদাল ও থোরের চাহিদাও ব্যাপক।
কোহিত গ্রামের লাবনী মৎস্য খামারের উদ্দ্যোক্তা লুৎফর রহমান জানান, তার প্রকল্পে ১৮ বিঘা জমি আছে। একটা পুকুর করা যার জলকর ১৪ বিঘা বাকি জমি পুকুরের পাড় হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। তার পুকুর পাড়ে ল্যাংড়া, আম রুপালী, খিরসা পাতি জাতের আমের গাছ লাগানো আছে। এছাড়াও পেয়ারা, লিচু গাছও লাগানো আছে। তার বাগানে ৪৬৫ টি আম গাছ আছে প্রতি বছর এই গাছ থেকে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার আম বিক্রি হয়। লিচু গাছ ২৫ টি যা থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি হয়। পেয়ারা গাছ ২০০ টি যা থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়। এই প্রকল্পে তিনি গরুর খামার করবেন বলেও জানান।
তরুণ উদ্যোক্তা আলহাজ শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে জানান, তিনি ১৪ বিঘা জমিতে একটি প্রজেক্ট করেছেন তার নাম দিয়েছেন ‘শখের পল্লী’। এখানে একটি পুকুর আছে যার জলকর ৬ বিঘা, বাকিটা পুকুরের পাড়। এই পুকুর পাড়ে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন। যেমন কলা, পেঁপে, ডালিম, আম। একপাশে গারোল এর ফার্ম ও আছে (গারোল ভেড়ার মতো দেখতে এক জাতীয় পশু), পরবর্তীতে ডেইরি ফার্ম এর পরিকল্পনা আছে তার।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই এখানে উৎপাদন করা হবে, তাও ন্যাচারাল পদ্ধতিতে, এখানকার সব কিছু্ই হবে বিষ মুক্ত।
তিনি শিক্ষিত ছেলেদের প্রতি আহবান জানান চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে যাদের সুযোগ আছে তারা যেন উদ্দ্যোক্তা হয়। এতে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেক ছেলে মেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে পারবে।
এ বিষয়ে মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, মাছ চাষ করা পুকুরে ৮ ঘণ্টা রোদের প্রয়োজন এবং পর্যাপ্ত বাতাসেরও প্রয়োজন। যদি পানিতে রোদ ও বাতাস ঠিক মতো পায় এবং গাছের পাতা পানিতে না পরে তবে মাছ চাষে কোন সমস্যা নেই। তবে পুকুরের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে বড় গাছ না লাগানোই ভালো।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ