নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
তালের শাঁস কিংবা পানি তাল পছন্দ করেন না এমন মানুষের জুড়ি মেলা ভাড়। তবে প্রচণ্ড দাবদাহে এর কদর বেঁড়ে যায় আরো কয়েকগুণ। মৌসুমি ফলের পাশাপাশি দিনে দিনে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই মিষ্ট ফলের জনপ্রিয়তা। ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এখন রাজধানীতেও যাচ্ছে ফরমালিনমুক্ত তালের শাঁস।
আর এই ফল সরবরাহে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে বেড়াচ্ছেন কলাপাড়ার গাছি এবং ফড়িয়ারা (পাইকার)।
কৃষকের বাড়িতে গিয়ে ডেকে ডেকে পানিতাল সংগ্রহ (স্থানীয় ভাষায়) করছেন তারা। আর তা দূর-দূরান্তে সরবরাহ করে বেশ ভালোই লাভের মুখ দেখছেন সরবরাহকারীরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ধুলাসার ইউপির বাবলাতলা বাজার সংলগ্ন একটি জলাশয়ের ধারে যেন বসেছে পানি তালের হাঁট। বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহনে করে করে নিয়ে আসা হচ্ছে শয়ে শয়ে সবুজ রংয়ের কাঁচা তালের ছড়া।
আর ঘাম ঝড়িয়ে একটি টিনশেডের ঘরে এসব ফল নামানোর কাজে সহায়তা করছেন বেশ কয়েকজন যুবক। আগ বাড়িয়ে কথা বলতেই জানা যায়, স্থানীয় ফল সংগ্রহকারী মহাজন মাসুদ রানার আড়তঘর এটি। যিনি ছোট ফড়িয়াদের মাধ্যমে গ্রাম থেকে স্থানীয় কৃষকদের তাল, কচি ডাব প্রভৃতি ফল সংগ্রহ করে রপ্তানি করে থাকেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
কথা হলে জানান, অন্তত বিশজন পাইকার রয়েছেন মাসুদ রানার আড়তঘরে। যারা গ্রাম-গঞ্জ থেকে তাল কিনে এনে পাইকারী বিক্রি করেন তার ঘরে। এবং এসব পাইকারদের মাধ্যমে ফল সংগ্রহ করে প্রতিদিন অন্তত ১৫ হাজার তাল সরবরাহ করছেন রাজধানীর কাওরান বাজারে।
তার ভাষ্যমতে বর্তমানে প্রচণ্ড গরম থাকায় ঢাকায় তালের শাঁসের চাহিদা অনেক। তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ভেজালমুক্ত এই ফলটি কিনে খেতে দামের বিষয়ে খুব একটা আমলে আনছেন না ক্রেতারা। তাই চাহিদার কমতি নেই।
তিনি জানান, ৫ টাকা দরে তাল কিনে ৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন রাজধানীর আড়তঘর গুলোতে। কিন্তু সেখানে পরিবহন খরচসহ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্যের শেষ পর্যন্ত এই তাল রপ্তানি করবেন বলেও জানান তিনি।
গ্রাম থেকে তাল সংগ্রহকারী হৃদয় হাসান জানান, গ্রামে ঘুরে ঘুরে ১’শ থেকে ১’ পঞ্চাশ টাকা দরে তালের ‘শ কিনে গাছির মাধ্যমে সংগ্রহ করে মাসুদ রানার ঘরে ৫টাকা দরে বিক্রি করছেন গত দু মাস ধরে। ফড়িয়া ইমাম হোসন জানান, শুরুতে তেমন লাভের মুখ না দেখলেও এখন বেশ ভালোই আছেন তিনি। সকাল হলেই বেড়িয়ে পরেন তালের সন্ধানে। পরে বিকেলের মধ্যে সংগ্রহের ফল বিক্রি করেন মাসুদের আড়তঘরে। তবে গ্রামীণ সড়কগুলোর উন্নতি হলে তালের শাঁস বিক্রি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলেও জানান তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, যতটুকু জানি যে পানি তাল অথবা তালের শাঁস স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে কলাপাড়া থেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হচ্ছে। তাতে করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের তালগাছ রোপনের বিষয়ে আরো উদ্যোগী করতে উদ্বুদ্ধ করবো।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চিনময় হালদার বলেন, তালের শাঁসে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাশিয়াম , আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ অনেক খনিজ উপাদান রয়েছে। এছাড়া গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। এমনকি কচি তালের শাঁসে রক্ত শূন্যতা দূর করাসহ চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ