নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
আগের দিনগুলোতে চলনবিল এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে দেখা যেত এক আধটা হ্যাজাক লাইট।
বাড়িতে ছোট্ট-বড় কোন অনুষ্ঠান হলেই সকাল বেলায় শুরু হত হ্যাজাক লাইট ঝাড় পোঁছ। তাকে জ্বালানোর প্রস্তুতি শুরু হতো সন্ধ্যা বেলায়। সবাই এই হ্যাজাককে জ্বালাতে পারতো না। সেরকম বিশেষ ব্যক্তিকে সেদিন পরম সমাদরে ডেকে আনা হতো। সেদিন তার চাল-চলন থাকতো বেশ, এভাবেই হ্যাজাক নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে করতে কথা হয় তাড়াশ পৌর সদরের পশ্চিম পাড়া মহল্লার রতন দাস (৬৫)’র সঙ্গে।
এরপর তিনি হ্যাজাক পরীক্ষা করতেন, তেল আছে কিনা দেখে নিয়ে শুরু করতেন পাম্প করা। একবার একটা পিন দিয়ে বিশেষ পয়েন্টে খোঁচাখুঁচি করা হত। তারপর একটা হ্যাজাকের নব ঘুরিয়ে কিছু জ্বলন্ত কাগজ তার সংস্পর্শে আনতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠত। তখন শুরু হত আচ্ছা করে পাম্প দেওয়া। ক্রমেই হ্যাজাকের মাঝখানের মেটাল থেকে বেশ উজ্জ্বল আলো বেরনো শুরু হত। হ্যাজাকের মাঝখানে যে জিনিসটা জলে তাকে মেটাল বলে। সেই সঙ্গে একটা বুক কাপঁন ধরানো হি……..স্ আওয়াজ হত। আবার মাঝে মাঝে হ্যাজাকের ওপর দিয়ে দুম করে আগুন জ্বলে উঠত। আবার কখনও বা গোটাটাই নিভিয়ে যেত, এমন কথা বলতে শোনা যায় রতন দাসের হ্যাজাক নিয়ে কথোপকথনে।
সফলভাবে হ্যাজাক জ্বালানোর পর সেই ব্যক্তির মুখে ফুটে উঠত এক পরিতৃপ্তির হাসি। আর হ্যাজাকের সেই উজ্জ্বল জাদুর আলোয় কচি-কাচারা চলে যেত এক আনন্দের জগতে। প্রাচীনতম আলোর সরঞ্জাম এই হ্যাজাক লাইট গ্রামবাংলা থেকে ত্রুমেই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। আজও সিরাজগঞ্জের তাড়াশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গোষ্ঠ লীলা কির্তনে হ্যাজাকের দেখা মেলে।
হ্যাজাক নিয়ে প্রবীন তছিরন (৯৫) স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, বিয়ে, পূজা-পার্বণ, যাত্রাপালা, এমন কি ধর্ম সভায়ও ভাড়া দেওয়া হত এই হ্যাজাক লাইট। হ্যাজাক দেখতে অনেকটা হ্যারিকেনের মতোই কিন্তু আকারে বেশ বড়। আর প্রযুক্তিও ভিন্ন রকম। জ্বলে পাম্প করে চালানো সাদা কেরোসিনের কুকারের মতো একই প্রযুক্তিতে। চুলার বার্নারের বদলে এতে আছে ঝুলন্ত একটা সলতে। যেটা দেখতে প্রায় ১০০ ওয়াটের সাদা বাল্বের মতো। এটি অ্যাজবেস্টরে তৈরি। এটা পুরে ছাঁই হয়ে যায় না। পাম্প করা তেল একটা নলের ভিতর দিয়ে গিয়ে স্প্রে করে ভিজিয়ে দেয় সলতেটা। এটা জ্বলতে থাকে ঠিক ততোক্ষণ যতক্ষণ তেল আর হাওয়ার চাপ থাকে চেম্বারে। তেলের চেম্বারের চারিদিকে থাকে চারটি বোতাম। একটি পাম্পার, একটি অ্যাকশন রড়, একটি হাওয়ার চাবি, আর একটি অটো লাইটার বা ম্যাচ। অ্যাকশন রড়ের কাজ হচ্ছে তেল বের হওয়ার মুখটা পরিষ্কার রাখা।
হাওয়ার চাবি দিয়ে পাম্পারে পাম্প করা বাতাসের চাপ কমানো বা বাড়ানো হয়। একবার হাওয়া দিলে জ্বলতে থাকে কয়েক ঘণ্টা আর ২ থকে ২.৫ লিটার তেলে জ্বলে সারা রাত ধরে।
সাধারণত বাতি বলতে বুঝায় কুপি, টর্চ লাইট, হ্যারিকেন ও হ্যাজাক। বাতি হল সেই সরঞ্জাম যা অন্ধাকার দূর করতে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীনকালে আগুনের ব্যবহারের মাধ্যমে বাতির প্রচলন হয়। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সবখানেই। ফিলামেন্ট বাতির বদলে এলইডি বাতির চলও নতুন নয়। তবে এলইডির সঙ্গেও এখন যুক্ত হয়েছে নানা রকম প্রযুক্তির বাতি। আর এভাবেই কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের জনপ্রিয় আলোর উৎস হ্যাজাক লাইট।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ