নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
করোনা তান্ডবের কারণে ২০২০ সালে ১৮ মার্চ থেকে সারাদেশে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশেষে খুলছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহে শুরু হয়েছে বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ চলছে। তবে করোনা মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক প্রফেসর মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজ চলছে।
শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যালয় খোলার পর থেকেই যদি প্রতিদিন সকল শ্রেণির ক্লাস চালু করা হয়, সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নাও হতে পারে। তার উপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জুনের মাঝামাঝি থেকে গত আগষ্ট মাসের শেষ দিকেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় করোনার সর্বোচ্চ তান্ডবের প্রভাব ছিল ময়মনসিংহ অঞ্চলে।
জেলা শিক্ষা বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৪০টি, মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল আছে ৬১৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কলেজ ৭৭টি ও মাদ্রাসা রয়েছে ৩৮৮টি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা এখনো আসেনি।
জেলার তিনটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ছিল বন্ধ। বিদ্যালয়ের মাঠ, শৌচাগারসহ বিভিন্ন জায়গা অপরিষ্কার হয়ে পড়েছে। শুক্রবার বিদ্যালয় খোলার বিষয়টা জানার পর থেকে তারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
শহরের রামবাবু সড়কের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আঙিনা ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কারের কাজ চলছে।
প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় বিশেষ প্রস্তুতি হিসেবে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে পানির কল (বেসিন)। ওই সব কলের সামনে রাখা হবে সাবান। শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ইতিমধ্যে অনলাইন ক্লাসে মহড়া হয়েছে।
শহরের কে বি ইসমাইল সড়কের প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুল ও মহারাজা সড়কের মুকুল নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। একসঙ্গে সব শ্রেণির ক্লাস হলে এ দুটি বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হবে কঠিন।
প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. চান মিঞা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলার সংবাদে তারা আনন্দিত। তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার হাজারের বেশি। স্বাভাবিক সময়ে একটি বেঞ্চে চারজন করে শিক্ষার্থী বসানো হয়। কোভিড পরিস্থিতি এক বেঞ্চে কতজন শিক্ষার্থীকে বসানো যাবে, সে ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি। সব শ্রেণির ক্লাস এক দিনে চললে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন। তবে সরকার যে নির্দেশ দেয়, তারা সেটিই পালন করতে প্রস্তুত।’
মুকুল নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০। বিদ্যালয়ের ছয় ফুট লম্বা প্রতিটি বেঞ্চে চার থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী বসে। এখানেও এক দিনে সব শ্রেণির ক্লাস চালু রাখা হলে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানা সম্ভব হবে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামছুল আলম বলেন, করোনাকালের বিশেষ প্রস্তুতি বিদ্যালয়ের প্রতিটি তলায় বেসিন বসানো হয়েছে। সেসব বেসিনে পর্যাপ্ত সাবান ও স্যানিটাইজার রাখা হবে। এ ছাড়া শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য যন্ত্র কিনেছেন তারা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনার বিষয়টি বাস্তবায়নে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম জানান, ইতোমধ্যে বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে মাস্ক রাখার ব্যবস্থাসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ