ঢাকা, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯, ৯ রমজান ১৪৪৪

পুকুর খনন বন্ধে বিক্ষিপ্ত জনতা, আদালতে মামলা

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৩৯ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৪১

সরিষা, পান, পেঁয়াজসহ নানা ফসলে ভরা হোজা অনন্তকান্দি ফসলি মাঠ। সবুজে ফসল দেখলেই যেন প্রাণ জুড়ে যায়। উপজেলার মাঠগুলো এখন সবুজ ফসলে ভরা। তবুও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধ পুকুর খনন।

পুকুর খননকারী ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। ফলে অনেকটা নির্বিঘ্নেই চলছে পুকুর খননের মহোৎসব।

অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিন রাত সমান তালে চলছে পুকুর খননের কাজ। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি পুকুর খননের খবরে ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা।

তারপরেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন এলাকায় চলছে পুকুর খননের কাজ। এতে ব্যাপক হারে কৃষি জমি সংকুচিত হচ্ছে।

কোনো প্রতিকার না পেয়ে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ কৃষকদের সঙ্গে পুকুর খননকারী চাক্রের সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের হোজা অনন্তকান্দি তিন ফসলি বিলে জোরপূর্বক পুকুর খনন করতে গেলে স্থানীয় কৃষকেরা বাধা দেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এমনকি দ্রুত তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করতে নিষেধ করেন এবং আসলে জমি থেকে ভেকু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় প্রভাবশালী পুকুর খননকারীরা সাধারণ কৃষকদের হুমকি দিয়ে আসছেন। এ ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি হোজা অনন্তকান্দির আব্দুল গফুরের ছেলে সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিনা সুলতানার আদালতে হাজির হয়ে তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করে স্থানীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৪/১৪৫ ধারা ঘটনা স্থলে জারি করার নির্দেশ দেন দুর্গাপুর থানায়। ১৫ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ বহাল থাকবে। আজ তারই কেউ উপস্থিত হলে আদালতের পরবর্তী আদেশ জানা যাবে।

স্থানীয়রা আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা। অতি মুনাফা লোভী ব্যক্তিদের এমন কর্মকাণ্ডে পরিবেশের উপর চরম ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।

উপজেলার কিসমত গণকৈড়, নওপাড়া, জয়নগর, ঝালুকা, মাড়িয়া, পানানগর ইউনিয়নে বেশ কিছু জমি লিজ নিয়ে একটি সংঘবদ্ধদল গত কয়েক মাস ধরেই ধানী জমিতে পুকুর খনন করলেও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। ফলে এসব এলাকায় এখন ধানী জমি নেই বললেই চলে। যেটুকু জমি পুকুরের বাইরে আছে সেটুকুও এখন জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। তবে বর্তমানে ওই সব এলাকায় এখন পুকুর খননের জমি না থাকায় পুকুর খননকারী দানবরা সমতল ধানী জমি কেটে পুকুর খনন করছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। আর এসব পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে সেব রাস্তা ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে রাস্তাগুলো।

মাড়িয়া ইউনিয়নের হোজা অনন্তকান্দির কৃষক আ. মান্নান জানান, আমাদের এই বিলে বছরে তিন থেকে চারটি কৃষি ফসল হয়। এই বিলের উপর নির্ভর করে গ্রামের প্রায় কয়েক শত কৃষক জীবিকা নির্বাহ করে চলেন। আমাদের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। যা আসে অনন্তকান্দি বিল হতে। এই বিলে পুকুর হলে গ্রামের প্রায় কয়েক শত পরিবার অনাহারে থাকবেন বলেও জানান।3

শুধু তাই নয়, সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রাম উন্নয়ন অবকাঠামো রাস্তাগুলো দিয়ে মাটি পরিবহন করে নষ্ট করে চলেছেন। সেই পাকা রাস্তা শুধু মাটি খেকোদের মাটি বহনের জন্য রাস্তাগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন আর ওই রাস্তা দিয়ে চলতে পারে না।

মাড়িয় ইউনিয়নের সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। তাছাড়া সমতল ধানী জমি এভাবে কেটে পুকুর খনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও একটি সিন্ডিকেট সমতল জমিতে পুকুর খনন করছেন। এতে করে পুকুর খননকারীরা লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে পরিবেশ ও আশপাশের জমির মালিকদের। তাছাড়া কয়েক বছর আগে বানানো রাস্তাগুলো অধিক ভারের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সরকার সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা বানালেও কিছু অসাধু ব্যক্তিদের স্বার্থের কাছে সরকারের কোটি কোটি টাকা আজ নষ্ট হতে বসেছে।

দুর্গাপুর থানার অফিসা ইনর্চাজ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, জমির শ্রেণি পরির্বতন করে পুকুর খনন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ পুকুর খনন কাজ করলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় তিনি আরও বলেন, হোজা অনন্তকান্দি বিলে আদালতের নির্দেশ মেনে শান্তির শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৪৪/১৪৫ জারি করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, অবৈধ পুকুর খনন কোনভাবেই কাম্য নয়। তারপরেও যে সব এলাকায় পুকুর খননের খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেসব এলাকায় ইতোমধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ