ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শাবান ১৪৪৪

সমমজুরি থেকে বঞ্চিত নারী কৃষি শ্রমিক

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৩

কৃষিতে নারীর অবদান নতুন নয় বরং টেকসই কৃষিব্যবস্থায় নারীর ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশে কৃষি খাতের সাফল্যের পেছনেও নারীদের বিশাল অবদান রয়েছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই।

সরকারের কৃষিতথ্য সার্ভিসের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, কৃষিতে নারীরা যে শ্রম দেন তার ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশের ক্ষেত্রে তাঁরা কোনো পারিশ্রমিক পান না। আর বাকি ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশের ক্ষেত্রে তাঁরা যে পারিশ্রমিক পান, তা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম।

অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক আর্থিক দৈনতায় তারা বাধ্য হন নামমাত্র মজুরিতে কাজ করতে।

এমনই একটি চিত্রের মূল ভূমিকায় তিন সন্তানের জননী আলেয়া বেগম। স্বামী তসলিম মামুদ রিকশাচালক ছিলেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এখন কাজে যেতে পারেন না। সংসারটার দায়িত্ব তার কাঁধে। কাকডাকা ভোরে বেরিয়ে পড়েন কাজে। সবার আগে ক্ষেতে কাজ শুরু করেন তিনি। তিনি কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন, ফিরে যান বিকেল ৫ টায়। সারাদিন পুরুষের সঙ্গে সমান শ্রম দিয়ে আয় করেন মাত্র ২০০ টাকা। একই কাজ করে যেখানে একজন পুরুষ শ্রমিক মজুরি পান ৪৫০ টাকা।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ৪ নং বগুলাগাড়ী ওয়ার্ডে এ চিত্র দেখা যায়।

শুধু আলেয়া বেগম নয়। দলবেঁধে যেখানে কাজ থাকে উপস্থিত হন আঁখি রানি, কমলা দেবী, মায়া রায়, লাইলি বেগমরা।

তারা বোরো ধানের বীজতলা উঠানো থেকে শুরু করে কাঁদামাটির জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বোরো ধানের চারা রোপন করছেন। এলাকার পুরুষ কৃষি শ্রমিকদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করেও তাদের চেয়ে অনেক কম মজুরি পেয়ে থাকেন তারা। কম পেলেও জীবন সংগ্রামের কাছে হার মেনে তারা বছরের পর বছর ধরে এভাবেই এই অঞ্চলে কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন।

নারী কৃষি শ্রমিক আলেয়া বেগম বললেন, ‘মাঠে আমরা পুরুষের সমান কাজ করলেও তাঁদের তুলনায় আমাদের মজুরি কম। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা কাজ করতে হয়। জমির মালিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তাঁরা অন্য গ্রাম থেকে শ্রমিক এনে কাজ করানোর হুমকি দেন।’

তিনি আরও জানান, আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে আগে পড়াশোনা করলেও এখন আর করতে পারে না। জমির মালিকেরা মনে করেন, পুরুষ শ্রমিকেরা আমাদের চেয়ে বেশি কাজ করেন। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও সুফল পাইনি। কেউ এ বিষয়ে সাহায্য করেনি। আমরা চাই এ বিষয়ে সবাই সচেতন হোক। সবাই আমাদের পাশে দাঁড়াক।

একই জাতির কাছে রাখলেন আঁখি রানি, কমলা দেবী, মায়া রায়, লাইলি বেগমরা।

মজুরি বৈষম্য আর পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজের সুযোগ কম পাওয়ায় বছরে একজন নারী কৃষি শ্রমিক পুরুষের তুলনায় কমপক্ষে ২৪ হাজার টাকা কম পেয়ে থাকেন।

নারী কৃষি শ্রমিকেরা মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, যা নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বড় অন্তরায়।

কৃষি শ্রম অধ্যাদেশ ১৯৮৪–তে নারী-পুরুষ উভয়ের ন্যূনতম মজুরি ৩ দশমিক ২৪ কিলোগ্রাম চাল অথবা সমপরিমাণ টাকা উল্লেখ করা আছে, যা এখনকার বাজারদরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কৃষিশ্রম অধ্যাদেশ যুগোপযোগী করে নারী ও পুরুষ উভয়ের সমমজুরি টাকার অঙ্কে পুননির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি।

এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে আলাপচারিতায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ জানালেন, উপজেলার ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। রয়েছেন অনেক নারী কৃষি শ্রমিক। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষিকাজ করে যাচ্ছেন অনেক নারী। অনেকে নিজের জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন করছেন। শুধু পুরুষ কৃষক নয়, নারী-পুরষ সব কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষিবান্ধব সরকার।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ