শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯

বিদ্যালয় বন্ধ করে বিলাসবহুল শিক্ষা সফরে শিক্ষকরা!

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৭

শিক্ষা সফরের নামে ফের বিতর্কে জড়ালেন বরিশাল নগরীর উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। স্কুল বন্ধ দিয়ে শিক্ষার্থীদের টাকায় শিক্ষার্থী ছাড়াই শিক্ষা সফরের নামে অনন্দ ভ্রমণে গেছেন শিক্ষকরা। এতে করে বিপাকে পড়েছে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিকোলাস লিটন টরেন্টোর নেতৃত্বে প্রায় ৫০ সদস্যদের একটি দল শিক্ষা সফরের নামে কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনে পাঁচদিনের আনন্দ ভ্রমণে গেছেন। ফলে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষকদের ‍এই স্বেচ্ছাচারী ভ্রমণের কারণে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে শত শত নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ক্লাস বঞ্চিত হয়েছে। ‍এ নিয়ে অভিবাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। নগরীতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এর আগে গত বছরও চার লাখ টাকার উপরে টাকা খরচ করে শিক্ষকরা শিক্ষা সফরে যাওয়ায় সমালোচনা হয়। করোনার পরে মানবিকতার দিক দিয়ে অসহায় শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা মওকুফ না করে সেই টাকা দিয়ে শিক্ষা সফরে গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। এনিয়ে তৎকালীন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বরিশালের ‍উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে আনন্দ ভ্রমণের জন্য ‍একটি বিলাসবহুল বাসে করে নগরীর চৌমাথা ‍উদয়ন প্রাইমারি স্কুলের সামনে থেকে সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে যান। ‍একই সাথে শিক্ষা সফরের নামে শিক্ষার্থীদের না নিয়ে অনন্দ ভ্রমণে গিয়ে স্কুল ফান্ডের লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা ব্যয় ও ‍উদ্বৃত্ত অর্থ লোপাটসহ প্রধান শিক্ষক ও কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন অভিবাবকবৃন্দ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেছেন, সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করার জন্য দুইদিন এবং কক্সবাজার এলাকায় অবস্থান করে পাঁচদিন তাদের ‍এই আনন্দ ভ্রমণের সিডিউল।

অপর এক শিক্ষক বলেন, পাঁচদিনের ভ্রমণের জন্য বাসভাড়া, খাওয়া ‍এবং সেন্ট মার্টিনের রিসোর্ট ভাড়ার খরচ মিলিয়ে জনপ্রতি প্রায় সাত-আট হাজার টাকা ব্যয়ের সম্ভ‍াবনা রয়েছে। ‍এজনয় জনপ্রতি প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে মাত্র ৩ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে, বাকিটা স্কুলের তহবিল থেকে বহন করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের টাকায় স্যারেরা আনন্দ ভ্রমণে যায় স্কুল বন্ধ দিয়ে। আমাদেরকেও নিতে পারতেন। যেহেতু আমাদের নেন না, তাহলে শিক্ষা সফরের জন্য আমাদের টাকা নেন কেন? শিক্ষা সফরে গেলে আমরা অনেক কিছু শিখতে এক কথায় সাধারণ জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম। স্যারেরা আমাদের মত গরীব ছাত্রদের এই শিক্ষাসফরের টাকা দিয়ে পড়াশুনার খরচ চালাতে সাহায্য করতে পারতো।

অন্য ‍এক শিক্ষার্থী বলেছেন, পাঁচদিন সফর শেষ করে ‍এসে টিচাররা আরও ‍একদুদিন ঠিক মতো ক্লাস করান নি। ‍এরপর ‍একসাথে না পড়িয়েই অনেকগুলো পড়া চাপিয়ে দেন।

এক অভিভবাবক বলেন, শিক্ষার্থীদের ছাড়া সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষা সফরে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্কুলের তহবিল মানেই শিক্ষার্থীদের টাকা। আর সেই টাকায় শিক্ষার্থী ছাড়া স্কুল বন্ধ দিয়ে শিক্ষকরা ‍একদুদিন নয় ‍পাঁচদিনের আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অপর আরেক অভিবাবক বলেছেন, স্কুলে ভর্তির সময় ‍এক টাকাও কম নেয়া হয়না। আনন্দ ভ্রমণের দিন ‍এবং খরচ কমিয়ে সেই টাকায় কিছু গরীব ছাত্রদের সাহায্য করতে পারতেন।

শিক্ষা সফরের নামে পাঁচদিনের আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার ব্যাপারে ‍উদয়ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিকোলাস লিটন টরেন্টোর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে, তিনি ও তার শিক্ষকবৃন্দ সেন্ট মার্টিনে ঘুরতে গিয়েছেন এমনটা স্বীকার করে বলেন, স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ‍উপলক্ষে ‍একদিন ছুটি, দুদিন সাপ্তাহিক ‍এবং পরবর্তী আরও ‍দুদিন সংরক্ষিত ছুটি থেকে পাঁচদিন ব্যয় করেছি।

এই ঘুরতে যাওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অবগত কি-না বা তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জেলা প্রশাসকের অনুমতি রয়েছে বললেও পরে অনুমোদনের বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যান।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ফাদার লাজারুস গোমেজ বলেছেন, শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ‍এটি ‍একটি নিয়মিত সিডিউল। তাই ‍এই ভ্রমণের অর্থ ব্যয়ের জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির সভায় অনুমোদন ও অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে, ‍এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ‍উদয়ন স্কুল অনুমতি নেয়নি। ‍

এবিষয় (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি) মনদীপ ঘরাই বলেছেন, নিয়ম থাকলেও তারা যেহেতু অনুমতি নেয়নি। তদন্ত পূর্বক আমরা ব্যবস্থা নেব।

শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষা সফর হয় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষাসফরে যাওয়ার সুযোগ আছে। শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষা সফর হয়না। ‍এটা বেঅইনী। শিক্ষকেরা আনন্দ ভ্রমণে গেছেন কিনা- তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ