নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
নড়াইলে আলমগীর খান পায়ে হেঁটে পিচঢালা পথে বেরিয়ে কলকাতা (ভারত) থেকে হেঁটে (বাংলাদেশ) ঢাকা যাচ্ছেন প্রকৌশলী আলমগীর খান (৩০) নামে এক যুবক।
মঙ্গলবার সকালে তিনি পায়ে হেঁটে নড়াইল-লোহাগড়া হাইওয়ে হয়ে নড়াইল জেলা ত্যাগ করেন।
‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান।’ প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নামে বিরল এ রোগে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে এ রোগে আক্রান্তের হিসেবে বিশ্বের মোট আক্রান্তের আনুপাতিক হারে এগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ। আর এই রোগে আক্রান্তদের বাঁচাতে পারে এক ব্যাগ রক্ত। রক্ত দান করতে প্রয়োজন হয় আত্ম-সচেতনতা। সেই সচেতনতা তৈরি করতেই হাতে পোস্টার, পায়ে শক্ত বুট।
যশোর-নড়াইল রোড ধরে পায়ে পায়ে এগিয়ে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোমবার যশোর থেকে রওনা হয়ে বিকেলে নড়াইলে পৌঁছান আলমগীর খান। এদিন সকালে যশোর থেকে নড়াইলের উদ্দেশ্যে রওনা হন সে।
তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা। কলকাতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে তার যাত্রা শুরু হয়। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে গন্তব্য বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। আলমগীর খান নামে ওই যুবক গত ৯ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এসে পৌঁছান বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁতে। বারাসাত থেকে তার রুট ছিল কলকাতা শহর ঘেঁষা যশোর রোড।
পথে যেতে যেতে কথা বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। রক্ত দিলে নিজের কোনো ক্ষতি হয় না বরং বাঁচে আরেকজনের জীবন-এমন কথা বোঝান রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকার উৎসুক মানুষকে। সাধারণ মানুষজনও আলমগীরের কথা শোনেন। কেউ কেই এগিয়ে করেন করমর্দন, তোলেন সেলফিও।
পথযাত্রায় অংশ নেওয়া যুবক আলমগীর খাঁন বলেন, ভারতের কলকাতায় আমাদের ভাষা হচ্ছে বাংলা আর বাংলাদেশের ভাষাও একই। আমার মূলত আন্দোলন থ্যালাসেমিয়া ও রক্তদান নিয়ে। থ্যালেসেমিয়া মুক্ত বিশ্ব গড়তে হবে আমাদের। না হলে আগামীতে প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে একজন বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে।
একই সঙ্গে তিনি জানান, সকলে একজোট হয়ে যদি থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় তাহলে শুধুমাত্র ভারত কিংবা বাংলাদেশ কেন, গোটা বিশ্ব থেকে থ্যালাসেমিয়াকে একটা সময় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব। আজ আমার পথযাত্রার ৭ম দিনে আমি নড়াইল জেলা অতিক্রম করছি। আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে আমার এ পথ যাত্রা শেষ হবে। বাংলাদেশ সরকারসহ সকলকে তিনি থ্যালেসেমিয়া নিয়ে ভাবতে আহ্বান জানান।
আলমগীর আরও বলেন, ২০১৬ সালে রক্তের অভাবে এক বড় ভাইকে মারা যেতে দেখেই মূলত তিনি রক্তদান ও থ্যালেসেমিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। যাদের ওজন ৫০ কেজি এবং বয়স ১৮ বছর তাদেরকে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এ দিকে পায়ে হেঁটে দূরত্ব অতিক্রম করা আলমগীরের কাছে নতুন বিষয় নয়। পায়ে হেঁটে এর আগে একবার কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। তাই হাঁটার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। যদিও বাংলাদেশে হেঁটে আসার অভিজ্ঞতা তার নতুন। তাই রয়েছে বাড়তি কৌতুহলও।
গত বছরও আলমগীর মালদা থেকে দিল্লি একইভাবে পায়ে হেঁটে প্রচারণা করেন। একই শ্লোগানে মে মাসে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন মালদা থেকে সিটি অফ জয় কলকাতায়। এবার তার গন্তব্য কলকাতা থেকে ঢাকা; উদ্দেশ্যও এক ‘রক্ত দিন, জীবন বাঁচান’।
এদিকে সোমবার বিকেলে নড়াইলে পৌছালে নড়াইলের মুচিরপোল এলাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর মধ্যে মানবিক নড়াইল, রক্তের ফেরিওয়ালা নড়াইল এবং একটু হাসি সেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
এ সময় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক নড়াইলের ইমামুল ইসলাম রিয়ান বলেন, কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে আলমগীর ভাই যে প্রচার করছে এটা বিরল ঘটনা। মানবিক কাজ সবাই করতে পারে না ইচ্ছা থাকলেও। তার এ উদ্যোগ আসলেই প্রশংসনীয়। আমাদের গ্রুপের পক্ষ থেকে আলমগীর ভাইকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা ও স্যালুট জানাই।
রক্তের ফেরিওয়ালা নড়াইলের সিনিয়র অ্যাডমিন সেচ্ছাসেবী সোহাগ শেখ রুদ্র বলেন, আলমগীর ভাই যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা আসলেই সাহসী উদ্যোগ। তিনি আবারও প্রমাণ করলেন স্বেচ্ছাসেবীদের কোন সীমানা হয় না। কলকাতা থেকে ঢাকা পাড়ি দেয়া চারটে খানিক কথা নয়। আমরা নড়াইলবাসী তাকে স্বাগত জানাই। আশা করি যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এসেছেন সেটাতে সফল হবেন। আমরা সকল স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করব।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ