ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ৫ রমজান ১৪৪৪

চুয়াডাঙ্গায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পশুর রক্ত-বর্জ্য

প্রকাশনার সময়: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:০০ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৩

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী সংলগ্ন বড়বাজারে জবাই করা পশু ও মুরগি-মাছের রক্ত-বর্জ্য পচে নদীর পানি দূষণের পাশাপাশি দুর্গন্ধে ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ নদীর দু’পাড়ের প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে বসবাসকারীদের জীবনযাপনে দুর্ভোগের শেষ নেই। দূষণের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির ঘটনা ঘটছে।

ভুক্তভোগীরা বলেছেন, স্থানীয় পৌরসভা ও সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না। ফলে পরিবেশ বিপর্যস্থতার পাশাপাশি এলাকাবাসীদের শ্বাসকষ্ট, শরীরে ক্ষত, পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে এলাকায় ব্যাপক স্বাস্থ্যহানি ঘটার আশংকা প্রকাশ করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মাছ-গোশত, সবজি ও মুদি বাজার। প্রবেশ মুখেই প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার পান বিক্রির হাট বসে। প্রধান সড়কের পাশে বসে মৌসুমী ও বিদেশি ফলের বাজার।

এ বাজারে বিশেষ করে গোশত পট্টিতে রয়েছে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। একটি মাত্র ড্রেন দিয়ে শহর ও বাজারের ময়লা পানি, রক্ত-বর্জ্য গিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীর পানি দূষণ করছে। দূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর কোল ঘেঁসে চারিদিকে বর্জ্য-আবর্জনা পড়ে থাকায় কাক, শকুন, চিল ও শুকর ওইগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে আরো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মাথাভাঙ্গা নদীর তীরের বাসিন্দা ফুলবানু, মহর আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী অভিন্নভাবে বলেন, নদীর দুষিত পানিতে গোসল করার কারণে গায়ে চুলকানি হচ্ছে। পানিতে কাপড়চোপড় কাচলে তাতেও দুর্গন্ধ থেকে যায়। দুর্গন্ধের কারণে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যায়না। দিনে ও রাতে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। শারীরিক রোগ ব্যাধি কাটেই না। ৩০ বছরের অধিক এ অবস্থা চলছে। বাতাসে এত দুর্গন্ধ যে বসবাস করাই আমাদের দুস্কর হয়ে পড়েছে।

বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী কালু ও কাঁচা সব্জি বিক্রেতা ইমতিয়াজ জানান, কসাইখানায় পর্যাপ্ত পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর জবাই করা পশুর রক্ত ও হাড় এবং ফেলে দেয়া গোস্ত, মুরগির নাড়িভুড়ি পঁচে দুর্গন্ধ আরো বাড়ছে। বাজারে এত দুর্গন্ধ যে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে আসছে না। ব্যবসা করা যাচ্ছে না, সেই সঙ্গে ক্রমেই ক্রেতা কমে যাচ্ছে।

বড়বাজারের ক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, এই বাজারে এত দুর্গন্ধ যে, এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানোই দুরূহ ব্যাপার। কেনাকাটা করতে এসে অস্বস্থিতে পড়তে হয়।

নীচের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ আলম জানান, এ বাজারে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জন ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা করেন। বাজারে বর্জ্য সরানো ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে বলতে গেলে হাট ইজারাদারদের হুমকির সম্মুখিন হতে হয়। প্রত্যেকদিন সকাল থেকে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস আমাদের নিতে ও ছাড়তে হয়। এর ফলে রোগের সঙ্গে আমাদের বসবাস বলতে গেলে চলে।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, প্রবাহমান নদী হলেও জীব-জন্তু জবাই করা বর্জ্য নদীতে ফেলা যাবে না। এটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ নদীর পানি ব্যবহার করলে বিভিন্ন বড় ধরনের রোগ হতে পারে। তবে চামড়ার রোগ হবেই। যারা প্রবাহমান নদীর পানি দূষিতের কাজে জড়িত তাদের সচেতন করাতে হবে। তাতেও যদি না হয়, তাহলে নদী দূষণ কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া বলেন, এটি পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত একটি বিশাল বাজার। পৌরসভায় বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ এ বাজার থেকে কেনাকাটা করে। বড়বাজারের যে গন্ধ সেটা আমরা ঠিক মতো ব্যবস্থা করতে পারছি না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রস্তাব পেয়েছি। এখান থেকে বাজার ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলবে। সেটা পেলে এ ব্যাপারে কাজ শুরু হবে। এই কাজ শেষ হলে এ ভোগান্তি আর থাকবে না।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ