ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শাবান ১৪৪৪

গুরুদাসপুরে আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব ৬ পরিবার

প্রকাশনার সময়: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫৪
আদম ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম

মহাজনি ঋণের টাকায় ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে চেয়ে ছিলেন আছিয়া বেওয়া (৪৫)। এজন্য আদম ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলামকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। তবে ছেলের আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। সেই শোকে স্বামী বেলাল হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। আদম ব্যবসায়ীকে বলেছিলেন, আমাদের আর জীবন চলে না। এবার হয়তো বিদেশ নাও, অন্যথায় টাকাটা ফেরত দাও। তারপরও ফেরত পাননি টাকা। মহাজনি ঋণ পরিশোধ করতে জমিই বেচে দিলেন আছিয়া বেওয়া।

টাকা ফেরত পেতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন আছিয়া বেওয়া। একবার ব্যাংকের চ্যাক দিয়েছেন আমিরুল। কিন্তু সেটা ভুয়া। স্বামীর মৃত্যুশোক, ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে না পারা আর মহাজনি ঋণের চাপে এখন মৃত্যু পথযাত্রী আছিয়া।

আছিয়া বেওয়া গুরুদাসপুর পৌর সদরের উত্তরনারি বাড়ি মহল্লার মরহুম বেলাল হোসেনের স্ত্রী। অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী আমিরুল পৌর সদরের দক্ষিণ নারিবাড়ি মহল্লার মৃত মোস্তফার ছেলে।

আছিয়া বেওয়া জানান, ২০২০ সালে ছেলে রাব্বিকে ব্রুনাই যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছিলেন আমিরুল। সেসময় ব্রুনাইয়ে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ছিলেন। সে বছরের ১৩ মে টাকা দিয়েছিলেন। সে আর বিদেশ যেতে পারেনি। ছেলে রাব্বিকে বিদেশ যেতে না পারায় ঋণের টাকা শোধ করতে বেড়ে যায় চাপ। চাপ সামলাতে না পেরে মারা গেছেন রাব্বির বাবা। এখন ছোট এই ছেলেটিকে নিয়ে তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আদম ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় আদালতে চেক ডিজওনারের মামলা হয়েছে। আমিরুলের খপ্পরে পরে শুধু যে আছিয়া বেওয়ারই সব গেছে এমন নয়; তার মতো দিনহীন আরও ৫টি পরিবার নিঃশ্ব হয়েছে।

সাইকেল মেকার আলালের ছেলে আশিককে বিদেশ পাঠাতে আমিরুলকে ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে ছিলেন। আশিকও বিদেশ যেতে পারেনি। সাইকেল মেকার আলাল উদ্দিন জানান, পুরনো সাইকেলের যন্ত্রাংশ ঠিক করে চলে আমার সংসার। তারপরও ঋণ করে ২০২০ সালে বিদেশ পাঠানোর জন্য আছিয়া বেওয়ার সাথে তিনিসহ আরও চারজনের মোট প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন আমিরুলকে। সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে সে।

তিনি আরও বলেন, ছেলে বিদেশ গিয়ে ভালো চাকরি করবে। সেই আয়ে ঋণ শোধ হবে। সংসারের অভাব-অনটনও দূর হবে। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সম্বল হারিয়ে আমরা এখন নিঃশ্ব প্রায়। সাইকেল ঠিক করে দিন শেষে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন। ঋণ শোধ করব কি করে। ওই আদম ব্যবসায়ীকে দ্রুত গ্রেফতার করে টাকা উদ্ধারের দাবি জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুদাসপুর উপজেলা পাটপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদিন, ফারুক হোসেন, বিন্যাবাড়ি গ্রামের এরশাদ আলী ও দক্ষিণ নাড়িবাড়ির আদম আলী দালাল আমিরুলকে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ বিদেশ যেতে পারেননি।

তারা জানান, কেউ ঋণ করে, কেউ ভিটে-েমাটি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। কিন্তু বিদেশ যেতে পারেননি। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও তারা হেয় হচ্ছেন।

অভিযুক্ত আমিরুল ইসলাম পলাতক থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মতিন জানান, গ্রেফতারি পরোয়না পাওয়া মাত্রই আমিরুল ইসলামকে গ্রেফতারে পুলিশ জোর চেষ্টা চালাবে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ