ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ৫ রমজান ১৪৪৪

শীতের বিদায়লগ্নে লাখো পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার

প্রকাশনার সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩২

প্রকৃতির দরজায় কড়া নাড়ছে ঋতুরাজ বসন্ত। ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে হিমেল হাওয়ার ক্ষণ। ঠান্ডা-গরমের সংমিশ্রণ ছোঁয়া নিতে শীতের শেষ সময়ে কক্সবাজারে বেড়েছে পর্যটক উপস্থিতি। সাপ্তাহিক বা অন্য ছুটিতে এ উপস্থিতি দ্বিগুণ হচ্ছে।

স্বাভাবিক নিয়মে মাঘ মাসের শেষে খুব বেশি শীত হওয়ার কথা থাকলেও কক্সবাজারের পরিবেশ উল্টো। সমুদ্র জেলাটির বর্তমান আবহাওয়া এখন নাতিশীতোষ্ণ। তাই পরিবার-পরিজন সঙ্গে নিয়ে আসা এসব পর্যটক মেতেছেন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সী গাল, সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট দেড় কিলোমিটার সৈকত জুড়ে দেখা মিলেছে পর্যটকের আনাগোনা। যে সব পর্যটক দল বেঁধে সাগরের নীল জলরাশি সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া ঢেউতে শরীর ভিজিয়ে মেতেছেন নিজের মতো। সৈকতের কিটকট (বীচ ছাতা) বসে অনেকেই উপভোগ করছেন সাগরের বিশালতা। আবার অনেকেই সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরা-ঘুরি, ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছবি তুলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন বার্মিজ মার্কেট, রামুর বৌদ্ধ বিহার, ১০০ ফুট বৌদ্ধমূর্তি, নাইক্ষ্যংছড়ির লেক, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ সব পর্যটন স্পট পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ছিল।

পর্যটকদের মাঝে শিশু-কিশোর ও যুবাদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ী রুমেল আহমেদ। তিনি বলেন, এ বয়সীদের কথা চিন্তা করে অনেক হোটেল শিশুবান্ধব বেশকিছু রাইড চালু করেছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বাড়তি আনন্দ জোগান দিচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। সেখানে সব বয়সীদের জন্য নাগরদোলা, হাওয়ায় ভাসা দোলনা, ঘোড়ার রাইড, নৌকা দোল, ওয়াটার রাইডসহ নানা খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

আর সৈকতে ভ্রমণে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষের গল্প অনেকটাই একই। সবার বলছেন, সাপ্তহিক ছুটিতে যান্ত্রিক নগরের ব্যস্ততা থেকে অবকাশ যাপন আর সাগর উপভোগ।

ঈদগাঁও এলাকার স্কুল শিক্ষার্থী নিশিরাজ (১৫) বললো, স্কুলে এখনো তেমন ক্লাস শুরু হয়নি। তাই বড় বোন, বান্ধবী ও ভাবিকে নিয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে সৈকতে ঘুরতে এসেছি। অটোরিকশায় হিমছড়ি, দরিয়ানগর, কলাতলী বিচে অন্য পর্যটকদের সঙ্গে আমরাও ঢেউ ছুঁয়ে দেখেছি। ফেরার পথে তারকা হোটেলে খেয়েছি সবাই।

ঢাকা থেকে স্বপরিবারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আনারুজ্জামান ও ইসরাত জান্নাত জানান, কর্মব্যস্ত জীবনে পরিবারকে সময় দেয়া হয় না। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবারকে একটু সময় দিতে ছুটে এসেছেন সাগর তীরে। বালিয়াড়িতে পরিবার নিয়ে মেতেছেন খেলায়। কক্সবাজারের আবহাওয়া ও পরিবেশ এখন খুব বেশি ভ্রমণ উপযোগী।

সোহাগ নামের অপর এক পর্যটক জানান, কক্সবাজারের সমুদ্র দেখলেই মনের সকল গ্লানি ভুলে সজীবতা ফিরে পাওয়া যায়। এখানে বার বার আসতে মন চাই।

কক্সবাজারে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন রাত্রিযাপন করতে পারে লাখের বেশি মানুষ। হিসেব মতে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারে লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন বলে জানিয়েছেন হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার।

তিনি জানান, শীত মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকে মুখরিত সাগরতীর। ফলে ভালো ব্যবসা হওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা।

সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, কক্সবাজারে এখন লাখের বেশি পর্যটক। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলো তৎপর রয়েছেন তাদের সদস্যরা। পর্যটকরা দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক সৈকতের ঘুরছেন। একই সঙ্গে কমপক্ষে ৪ হাজার পর্যটক শুক্রবার সকালে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে গেছেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হোটেল-মোটেল জোন, সৈকত, হিমছড়ি, দরিয়ানগর এবং ইনানীতে কয়েক ভাগে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। রয়েছে স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকিও। এছাড়া সাদা পোশাকেও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন এলাকায় পর্যটক বাড়লেই সংশ্লিষ্টরা তৃপ্ত হন। পর্যটন জেলার প্রশাসক হিসেবে সৈকতে লোকসমাগম বাড়লে আমরাও খুশি। হয়রানি রোধে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ দল সব জায়গায় নজরদারি রাখছে।

সৈকতে গোসল করার সময় বিপদ এড়াতে ভ্রমণপিপাসুদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ডিসি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ