ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শাবান ১৪৪৪

আবারও উত্তপ্ত বাঁশখালীর ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রকাশনার সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৫

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে টিকাদারিকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো থ্রির যৌথ মালিকানাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বঙ্গোপসাগরের কূলঘেষে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা এলাকায় স্থাপিত বেসরকারিভাবে নির্মিত এ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু থেকে জমি অধিগ্রহণ ও বিভিন্ন নির্মাণ কাজে বাধাসহ টিকাদারির কাজ পাওয়াকে কেন্দ্র করে একের পর এক সংঘর্ষ জড়াচ্ছে স্থানীয় কয়েকটি চক্র।

এ দিকে গত বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার ভোরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় পুলিশ ও টিকাদারের উপরের দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে স্থানীয় চক্রটি। ভাঙচুর করেছে পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি টিকাদারির মালামালের গাড়ি।

এ ঘটনায় বাঁশখালী থানার ওসি তদন্ত সুমন চন্দ্র বণিক ও ৬ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। এ দিকে ঘটনার পরপরই বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা লেয়াকত আলীকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

অভিযোগ রয়েছে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, নির্মাণ কাজে বাধা, টিকাদারি, পুলিশের উপর হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি।

এ দিকে টিকাদারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে পৃথক ৩টি মামলা হয়েছে। মামলা ৩টি করেছেন ডিবি পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত টিকাদার প্রতিষ্ঠান।

এতে ৩ মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী, যুবদল নেতা আবু আহমদ ও আব্দুল খালেককে প্রধান আসামি করে আরও অর্ধশতাধিক জ্ঞাত এবং অজ্ঞাতনামা দুইশ জনকে আসামি করা হয়।

জানা যায়, ২০১৫ সালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ থেকে শুরু ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৮টি সংঘর্ষ হয়। এতে এই পর্যন্ত এসব সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত এবং অন্তত তিন শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এসব সংঘর্ষে পিছনে ছিল মূলত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজে বাধা। চাঁদা দাবি, জোর করে টিকাদারি কাজ নেওয়া। কাজ না পেলে বাধা দেওয়া, জমি অধিগ্রহণে চাঁদা ও স্থানীয় কৃষক-শ্রমিক জনতাকে ভুল বুঝিয়ে উস্কানি দিয়ে কয়লাবিদ্যুৎ বিরোধী আন্দোলন করা।

এসব করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন কাজ থেকে বিভিন্ন সময় কোটি কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে আসতেছিলো এ চক্রটি। অভিযোগ রয়েছে এ চক্রটির নেতৃত্বে দিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতা লেয়াকত আলী, তার সহযোগী যুবদল নেতা আবু আহমদ। শত শত কোটি টাকার মালিক ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নামে রয়েছে কয়েকশ হেক্টর জমি।

যার ভিত্তিমূল্য কয়েকশ কোটি টাকা। বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন আন্দোলন তৈরি করে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমন্বয়কারী ফারুক আহমেদ বলেন, গতকালকের ঘটনাটি প্রজেক্ট এলাকার বাহিরে হয়েছে। এটি আমাদের কোন বিষয় নয়। এটি বাহিরের বিষয়। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ চলতেছে। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।

চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নূর আহমেদ বলেন, একটি মামলায় লেয়াকতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত বাঁশখালী থানা থেকে আমাদের রিকুইজিশন দেওয়া হলে তারপর অভিযান চালিয়ে আলোচিত সেই ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) কামরুল ইসলাম সুমন বলেন, একটি মামলায় আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে তাকে গ্রেফতারের পর তার অনুসারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে পরে হামলা করে। এতে হামলায় বাঁশখালী থানার ওসি তদন্ত সুমন চন্দ্র বণিকসহ ৬ পুলিশ সদস্যসহ ১৩জন আহত হয়। এদিকে ঘটনার পর পরই গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় দেড় শতাধিক পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। আমি নিজেও উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ