ঢাকা, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ৮ চৈত্র ১৪২৯, ২৯ শাবান ১৪৪৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন

নিরুত্তাপ ভোটে প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রকাশনার সময়: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি)।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) মধ্য রাতে শেষ হচ্ছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। বর্তমানে চলছে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। তবে ভোটারদের মাঝে তেমন কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিত বাড়াতে রাতদিন কাজ করছে আওয়ামী লীগ।

ভোটের দিন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। নিরুত্তাপ এই ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।

এদিকে প্রচারণার শেষ দিনে সোমবার সকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তারের পক্ষে আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা কেবি স্কুল মাঠে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

জাপা প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী গণসংযোগ করেছে সরাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এবং জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল গণসংযোগ করেছে আশুগঞ্জে। আর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ নিখোঁজ থাকায় গত ৪৫ দিন যাবত তার নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। এই ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া (কলারছড়ি প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ (মোটর গাড়ি প্রতীক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী (লাঙল) মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা হলেও বিজয়ের পথে উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়া এগিয়ে রয়েছে।

উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া (কলারছড়ি প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ-(মোটর গাড়ি প্রতীক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী (লাঙল), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল-(গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একই আসনের দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (আপেল প্রতীক)। যদিও প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন।

উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটি উম্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ওই প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়ার (কলারছড়ি) পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা আজাদ ওরফে শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কলারছড়ির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন গঠিত। দুই উপজেলায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন ও আশুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৮টি ইউনিয়ন। উপনির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯টি এবং আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার। উপনির্বাচনে মোট কেন্দ্র ১৩২টি। এর মধ্যে সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৮৪টি ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৪৮টি ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে।

এদিকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উপনির্বাচন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নির্বাচনে সংসদীয় আসনে অফিসারসহ ১ হাজার ১শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার কথা রয়েছে। এছাড়াও থাকবে ৪ প্লাটুন বিজিবির সদস্য, র‌্যাবের ৯টি টিম, পুলিশের ৯টি মোবাইল টিম ও ৪টি স্ট্রাইকিং টিম। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাত্তার দায়িত্ব পালন করবে ৩ জন পুলিশ, অস্ত্রধারী ২ জন আনসার, লাঠিধারী ১০ জন আনসার ও ২ জন গ্রাম পুলিশ। উপনির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপনির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপনির্বাচন উপলক্ষে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে অফিসারসহ ১ হাজার ১শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।

এছাড়াও থাকবে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের একাধিক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। উপনির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ