শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯
জানান দিতে চায় অস্তিত্ব

বিএনপির ইউনিয়ন পদযাত্রা আজ

প্রকাশনার সময়: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৭

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি, বিদ্যুৎ গ্যাস ও নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ শনিবার মাঠে নামছে বিএনপি। একযোগে সারা দেশের সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

ইউনিয়ন পদযাত্রার মধ্যে দলটি তৃণমূলের গ্রামে-গঞ্জে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়। ইতোমধ্যে তৃণমূলে পাড়া-মহল্লায় নেতাকর্মীদের মাঝে লেগেছে কর্মসূচির দোলা। ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার মতো নতুন ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন করে যাত্রা করবে। তবে অতীতের মতো এবার সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে অহিংস কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো ফাঁদে পা দেবে না তারা। তবে একই দিন পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে সারা দেশের ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ থাকায় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিএনপির অনেক নীতিনির্ধারক। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

দলটির নেতারা বলছেন, সারা দেশে ইউনিয়নে পদযাত্রার পর জেলা ও মহানগরে এ কর্মসূচি দেয়া হবে। এরপর রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ‘লংমার্চ’ বা ‘ঘেরাও’-এর মতো কর্মসূচি আসতে পারে। যেখান থেকে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলন গণবিস্ফোরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে। সেই লক্ষ্যে শহর থেকে একেবারে গ্রামের মানুষকেও যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সারা দেশে ইউনিয়ন এবং পরবর্তী সময়ে জেলা পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচিকে বড় আন্দোলন গড়ার ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিন নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির তৃণমূল এখন অত্যন্ত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। অতীতের কর্মসূচিগুলোতে সেটার প্রমাণও দিয়েছে তারা। এখন তাদের নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দরকার নেই। সক্ষমতা যাচাই করতে হবে ঢাকা মহানগরের। কারণ, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন হলেও ঢাকায় ব্যর্থতার কারণে সে আন্দোলন সফলতা পায়নি।

জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি সফলে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। তৃণমূলের এ কর্মসূচিতেও নিকট অতীতের মতো নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ঘটাতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কর্মসূচিতে নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। এ ছাড়া দলের সাবেক এমপি এবং সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরাও অংশগ্রহণ করবেন। দলের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সার্বিক কর্মসূচির সমন্বয় করবেন, আর জেলা নেতারা কর্মসূচি মনিটরিং করবেন।

দলীয় সূত্র জানায়, মূলত দলের উপজেলা পর্যায়ের নেতারাই ইউনিয়নে পদযাত্রার এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মকৌশলের জন্য স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে উপজেলা নেতা গিয়ে কর্মসূচির তত্ত্বাবধান করবেন।

কর্মসূচিতে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে তাদের মাঝে ১০ দফা দাবি সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তবে ঢাকা মহানগরে এদিন পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে না বিএনপি। মহানগরের বাইরের যেসব ইউনিয়ন আছে সেখানে এ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে।

এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই দিনে বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টিও ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে। এটি পদযাত্রা যুগপৎ আন্দোলনের ষষ্ঠ কর্মসূচি।

জানা যায়, গেল বছরের ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূলে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। উপজেলা-থানা ও ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে দলটি। এরপর ১২ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগীয় গণসমাবেশ করে বিএনপি।

সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলটির দাবি, ওইসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ওইসব কর্মসূচি ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ফের মামলা-হামলার মুখে পড়েন। গ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির ভয়ে নতুন করে অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। সাবেক এমপিসহ দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা হামলার শিকার হন।

এমন প্রেক্ষাপটে রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচি না দিয়ে ফের তৃণমূলে কর্মসূচি দেওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন অনেক সিনিয়র নেতা। তারা আশঙ্কা করছেন, একই দিন আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি থাকায় সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নতুন করে হামলা-মামলার শিকার হতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নয়া শতাব্দীকে বলেন, এখনকার কর্মসূচিতে সারা দেশের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের কর্মসূচিগুলোতে মানুষ এতটাই উৎসাহিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আগের যে কোনো কর্মসূচির তুলনায় বর্তমানে মানুষের উপস্থিতি শুধু সন্তোষজনক নয়, অনুপেরণার উৎস বটেও।

তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এবার সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কর্মসূচি এমনিতেই নতুন ধরনের। দেশের হাজার হাজার ইউনিয়নে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের মাঝে দোলা লেগেছে। যা অভুতপূর্ব। ইউনিয়নে দোলা লেগেছে এ কর্মসূচি।

নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অনেকটাই ফয়সালা হয়ে যাবে— সরকারের ভাগ্য। কারণ সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন থেকে হাঁটা শুরু করলে সেই হাঁটা ক্ষমতার মসনদ পর্যন্ত যেতে পারে। এ পদযাত্রার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ দাবি এবং ১০ দফা প্রতিষ্ঠা। আগামীতেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই এ সরকারের বিদায় নিশ্চিত করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, এ সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা। আসলে তারা সব সময় মিথ্যা ভিত্তিহীন কথা বলে। আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমরা চেষ্টা করছি, এ সরকারের পতন ঘটাতে, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের একটাই লক্ষ্য, এ সরকারের পদত্যাগ। কারণ, এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তারা নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া শতাব্দীকে বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচির দিনে কাউন্টার প্রোগ্রাম দিচ্ছে। এটা কোনো কর্মসূচি হতে পারে না। এরা (সরকার) কাউন্টার প্রোগ্রাম দেয় মূলত কর্মসূচির দিন বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাতে। তবে এতে আর কোনো লাভ হবে না। ইতোমধ্যে ঢাকায় আমরা চারটি পদযাত্রা করেছি, সেখানেও প্রতিটি দিন তারা শান্তি সমাবেশ করেছে, তাতে কি কোনা লাভ হয়েছে?

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তা না হলে আমরা একটা কর্মসূচি দিয়েছে তার ভিত্তিতে তাদের পাল্টা কর্মসূচি দিতে হবে। এটা রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। তাদের (সরকার) মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা যে নাই এটাও জনগণ দেখছে। অতীতেও আমরা আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছি। আগামীতে আমাদের যত কর্মসূচি আসবে সেগুলোও নেতাকর্মীরা পালন করতে ঐক্যবদ্ধ।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ