ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ৫ রমজান ১৪৪৪

কূটনৈতিক আনাগোনা বাড়বে

প্রকাশনার সময়: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪২

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেছে বেড়েছে বিদেশিদের ঢাকা সফর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সফরের ঠিক এক মাসের মাথায় মঙ্গলবার ঢাকা সফরে এসেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফরের কাউন্সেলর ডেরেক এইচ শোলেট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সামনে রেখে আগামী কয়েক মাসে বিদেশি কূটনৈতিকদের তৎপরতা আরও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে বিদেশিদের প্রবল আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক পশ্চিমা দেশের ঢাকাস্থ দূতাবাস বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সুযোগ পেলেই কথা বলেছেন। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘুরে এসেছেন। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। বিএনপিও নিয়মিত বিরতিতে বিদেশি দূতাবাসে গিয়ে ধরনা দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তুলে ধরছে নানা অভিযোগ। সব মিলিয়ে নির্বাচনি বছরে ঢাকায় কূটনীতিকদের আসা-যাওয়া যেমন বাড়ছে তেমন বাড়ছে রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশিদের খোলামেলা মতামত। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকের ঢাকা সফর সেই বার্তাই বহন করছে।

সূত্র জানায়, গত চার মাসে চারজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কূটনীতিক ঢাকা সফরে এসেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার। তিনি গত নভেম্বরে ঢাকা সফর করে গেছেন। এরপরই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঢাকা সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা (বিশেষ সহকারী) এবং হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ঊর্ধ্বতন পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লোবাচার। পরের সপ্তাহেই সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের নীতিকেই স্পষ্ট করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। সামনের দিনগুলোতে সম্পর্কের ব্যাপারে এগুলোই মূল নিয়ামক হবে। সফরকালে কূটনৈতিকরা রাজনীতি নিয়ে যা বলছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ আছে। হয়তো তারা উচ্চস্বরে কিছু বলছেন না, কিন্তু কূটনীতির ভাষা বুঝলে তার মধ্যে অনেক কিছু পাওয়া যাবে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনের তরফে এরই মধ্যে একাধিকবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ হিসাবে চলতি বছর হলো নির্বাচনি বছর। আর নির্বাচনি বছরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুবিধা আদায়ে বিদেশিদের কাছে দৌড়ঝাঁপ বাড়ায়। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাতাবরণে চলে নানা গোপন যোগাযোগ। এরই অংশ হিসেবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও টানা চতুর্থবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে শুরু করেছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। চেষ্টা করছে নির্বাচনি আবহ তৈরির। পাশাপাশি সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

এদিকে, নির্বাচন ঘিরে বসে নেই মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। রাজনীতির মাঠে তাদেরও তৎপরতা রয়েছে। তারা ক্ষমতাসীন সরকার বা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দলটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করছে। শিগগিরই পদত্যাগ করে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি করে আসছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে সরকার কিছু করবে না। যা হবে তা সংবিধানের আলোকেই হবে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে উন্নয়ন সহযোগী দেশ এবং সংস্থাগুলোও। কিছু করা হবে— এমন প্রত্যাশা নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশ এবং সংস্থাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে দেশের কোনো রাজনৈতিক দল। এ জন্য কূটনীতিকপাড়ায় তাদের তৎপরতা রয়েছে বলেও আলোচনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে আগামী কয়েক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও একাধিক দেশের কূটনীতিকরা নিয়মিতভাবে ঢাকা সফরে আসবেন। যা রাজনৈতিক সচেতনতা মানুষের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার একই দিনে ঢাকা সফরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের ভবিষ্যৎ কৌশলবিষয়ক বিশেষ দূত জ্যাং সুং মিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোত্রা। নির্বাচনি বছরে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ঢাকা সফর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ঢাকা সফর এটি স্বাভাবিক ঘটনা। এসব সফরকে বিশেষভাবে দেখার সুযোগ নেই। তাদের ঢাকা সফর বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক। ধারণা করছি, সামনে এ ধরনের সফর আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের মধ্যে একটি কৌশলগত অবস্থান তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন কাঠামো বা অর্থনৈতিক কাঠামো যত মজবুত হবে এ ধরনের সফর আরও বাড়বে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ